পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী, ছাত্র পরিষদের প্রতিবাদ

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী, ছাত্র পরিষদের প্রতিবাদ

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী, ছাত্র পরিষদের প্রতিবাদ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর বৈঠকে ‘তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের প্রস্তাব’ তুলে ধরা হয়েছে—এ ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান জেলা কমিটি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। তারা দাবি তোলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার। ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই দাবি সরাসরি সংবিধানবিরোধী এবং দেশদ্রোহীতার সামিল।

আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের সভাপতি আসিফ ইকবাল বলেন, “মাইকেল চাকমাসহ ইউপিডিএফের প্রতিনিধিদলের সবাই দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সঙ্গে বৈঠকে বসা মানে এই অপরাধীদের রাজনৈতিক বৈধতা দেওয়া এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে উৎসাহ দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের উপস্থিতিতে এই ধরনের দাবির উপস্থাপন অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। এতে প্রশ্ন উঠেছে, কমিশন আসলে কী করছে—গণতন্ত্রের কথা বলছে নাকি রাষ্ট্রবিরোধী শক্তিকে প্রধানমঞ্চে তুলে আনছে?”

পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, ইউপিডিএফ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো অতীতেও বাংলাদেশের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ১৯৭২ সালে সন্ত লারমা শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে স্বায়ত্তশাসনের দাবি তোলেন। একইভাবে মাইকেল চাকমারা সেই পথেই হাঁটছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব সংবিধানবিরোধী, ছাত্র পরিষদের প্রতিবাদ

ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো ব্রিটিশ আমলের ১৯০০ সালের বিধি চালু রয়েছে, যা বাঙালিদের ভূমি অধিকারসহ বহু মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তার ওপর, সশস্ত্র সংগঠনগুলোর দাপটে পাহাড়ে এখনো বিরাজ করছে সন্ত্রাসের রাজত্ব। স্বাধীনতার পর থেকে এসব সংগঠনের গুলিতে এক হাজারেরও বেশি সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য শহীদ হয়েছেন। নিহত হয়েছেন হাজার হাজার নিরীহ বাঙালি ও পাহাড়ি সাধারণ মানুষ।

সংবাদ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে—

১. ইউপিডিএফ, জেএসএস ও কেএনএফ সহ পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষনা করতে হবে।
২. দেশদ্রোহী মাইকেল চাকমা, সন্ত লারমা, দেবাশীষ রায় সহ পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সকল গডফাদারদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
৩. অখন্ডতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে পাহাড়ে সেনাক্যাম্প বৃদ্ধি করতে হবে। পুলিশ ও এপিবিএন’কে শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জামাদি দিয়ে সেনাক্যাম্পের পাশাপাশি কিছু পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
৪. সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান বন্ধে নতুন করে বেশ কিছু বিজিবির বিওপি স্থাপন করতে হবে।
৫. বৈষম্যমূলক ১৯০০ সালের শাসনবিধি বাতিল করে পাহাড়ে সাম্য ও সংহতির পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে সভাপতির বক্তব্যে পরিষ্কার বলা হয়, “পাহাড়ে যারা রক্তের হোলিখেলা খেলেছে, যারা একাধিক নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে, তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রের নামে কোনো আলোচনা হতে পারে না। সন্ত্রাসীরা কখনোই জনগণের প্রতিনিধি নয়, তাদের স্থান রাজনীতির মঞ্চে নয়—জবাবদিহির কাঠগড়ায়।”

উল্লেখযোগ্য যে, ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় ইউপিডিএফ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনগুলো কোটা আন্দোলনের নামে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় বিক্ষোভ করে দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে। এছাড়া গত সেপ্টেম্বরে দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতায়ও মাইকেল চাকমার প্রত্যক্ষ ইন্ধনের অভিযোগ আছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।