রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণকাজে সশস্ত্র হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ইউপিডিএফ-জেএসএসের বিরুদ্ধে

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণকাজে সশস্ত্র হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ইউপিডিএফ-জেএসএসের বিরুদ্ধে

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণকাজে সশস্ত্র হামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ইউপিডিএফ-জেএসএসের বিরুদ্ধে
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) চলমান একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজে কোটি টাকার চাঁদা দাবি করে সশস্ত্র হামলা ও হুমকির অভিযোগ উঠেছে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য অঞ্চলের আঞ্চলিকদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইউপিডিএফ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস-এর বিরুদ্ধে। বারবার হামলা এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করার পেছনে এসব সংগঠনের সন্ত্রাসীদেরই হাত রয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

গতকাল রোববার (১১ মে ২০২৫) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের একটি দল। তারা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় এবং চাঁদা না দিলে হামলার হুমকি দেয়। এসময় উপস্থিত শ্রমিক-কর্মচারীরা আতঙ্কে কাজ বন্ধ করে দেয়। নিরাপত্তা প্রহরী জেফলিন চাকমা ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগেও জেএসএস-এর একটি গ্রুপ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রায় সোয়া কোটি টাকা আদায়ের পর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু একই প্রকল্পে আবারও চাঁদাবাজির ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় এমই-আরবি জয়েন্ট ভেঞ্চার নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তিন তলা ভীতবিশিষ্ট তিন তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করছে। প্রকল্প ব্যয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার রাকিব জানান, “সরকারি নিয়ম মেনে আমরা কাজ করছি। কিন্তু শহরের অভ্যন্তরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রকাশ্যে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। জীবন-জীবিকার তাগিদে বাধ্য হয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দাবি করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের ক্যাম্পাসে বারবার প্রবেশের অন্যতম কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরেই তাদের সোর্স বা আত্মীয়স্বজনের অবস্থান। এসবের মাধ্যমে তারা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ তথ্য সহজেই সংগ্রহ করে সময় বুঝে হামলা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল গফুর জানান, “ভিসি মহোদয়ের নেতৃত্বে আমরা রাঙামাটির সামরিক, বেসামরিক এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।”

রাঙামাটি কোতয়ালী থানার সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, এখনো পর্যন্ত এবিষয়ে কেউ লিখিতভাবে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।

বিশ্লেষক মহল বলছে, একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের এমন অনুপ্রবেশ এবং চাঁদাবাজি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং পার্বত্য এলাকায় চলমান শিক্ষা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ভবিষ্যৎকেও হুমকির মুখে ফেলছে।

উল্লেখ্য, ইউপিডিএফ ও জেএসএস দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন এবং সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা—সব ক্ষেত্রেই এ দুই সংগঠনের নৈরাজ্যকর ভূমিকা প্রায়শই সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ঠিকাদার, ব্যবসায়ী ও সরকারি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়, চাঁদা না দিলে অপহরণ কিংবা সশস্ত্র হামলার মতো ঘটনা ঘটানো, এমনকি দলীয় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেরা নিজেরাও সংঘর্ষে জড়ানো—এসবই তাদের ‘স্বাভাবিক’ কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর এই চাঁদাবাজি ও সহিংস কর্মকাণ্ডে বহু সাধারণ পাহাড়ি ও বাঙালি নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন, অপহৃত হয়েছেন বা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এসব সন্ত্রাসী তৎপরতা পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।