পার্বত্য চট্টগ্রাম: সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সুশীলদের ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ এবং বাস্তবতা

পার্বত্য চট্টগ্রাম: সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সুশীলদের ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ এবং বাস্তবতা

পার্বত্য চট্টগ্রাম: সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সুশীলদের ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড’ এবং বাস্তবতা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

✍️ মোঃ সাইফুল ইসলাম

পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আঞ্চলিক অস্ত্রধারীদের হতাহতের পর দেশের কিছু মহল এবং বিদেশি কথিত মানবাধিকার সংস্থা যে মাত্রায় প্রতিবাদ ও বিবৃতি দেয়, তা দেখে প্রশ্ন জাগে—বাংলাদেশ কি এখনও নিজস্ব ভূখণ্ডে সন্ত্রাস মোকাবিলার সম্পূর্ণ অধিকারই রাখে না? অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চললেও বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে এত বিতর্ক ও অপপ্রচারের মুখে পড়তে হয় কেন, তা ভাববার বিষয়। এই দ্বৈত মানসিকতা বুঝতে গেলে দেশের সামরিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা ছাড়াও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনের চাপকেই ভালোভাবে বিচার করতে হয়।

ভারতের ছত্তিশগড়, কাশ্মীর বা মণিপুরে যখন সেনাবাহিনী বা আধাসামরিক বাহিনী মাওবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা করে, তখন সেখানকার মিডিয়া থেকে আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত কেউই “মানবাধিকার লঙ্ঘন” বলে চিৎকার করে না। পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মিশর, ইসরায়েল সন্ত্রাস দমনের নামে দিনে দিনে ‘ক্রসফায়ার’-এ মানুষ মারছে, আবার বাহবা পাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ যখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ, খুনি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ও সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তখনই শুরু হয় কুম্ভিরাশ্রু, মানবাধিকার আর জাতিসংঘের বুলি আওড়ানো।

⚠️যারা নিরব থাকেন অন্য দেশে, চিৎকার করেন কেবল বাংলাদেশে

জাতিসংঘ কিংবা পশ্চিমা মিডিয়াগুলো যখন কাশ্মীর, গাজা, সিন্ধ, বা ওয়েস্ট পাপুয়ার হত্যাকাণ্ডে নিরব থাকেন, তখন তাদের মানবাধিকারের কথা বাংলাদেশে এসে হঠাৎ জেগে ওঠে। কেন? কারণ কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটনাকে “আন্তর্জাতিকীকরণ” করার স্বপ্ন দেখে। আঞ্চলিক অস্ত্রধারী গোষ্ঠীগুলোকে “আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা” হিসেবে উপস্থাপন করে একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রচারণা চালানো হয়। অথচ এরা নিজেরাই শত শত খুন, অপহরণ, গুম, শিশু সংগ্রহ করে অস্ত্রধারী বানানো, চাঁদাবাজি—এসব অপরাধে জড়িত।

বলতে গেলে, ভারত, ইউরোপ বা আমেরিকান কিছু সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আন্দোলন’ গুলোকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলে বৈধতা দেওয়া হয়—যা অনেক সময় কার্যত বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয় দেয় ফলে, যখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এসব গোষ্ঠীর অস্ত্রধারী অংশের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়, তখন তা আন্তর্জাতিকভাবে ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন’ হিসেবে চিত্রায়িত করা হয়।

🛑বিদেশি এনজিও ও তথাকথিত মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষপাত

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করা কিছু বিদেশি এনজিও বা মানবাধিকার সংস্থা সব সময় একচোখা অবস্থান নেয়। এসব সংগঠন ঐ অঞ্চলের সশস্ত্র আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোকেই “অবদমিত জাতিগোষ্ঠী” হিসেবে দেখাতে চায়। তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট ও একমুখী তথ্য পরিবেশন করে, অথচ আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর গুম, খুন, চাঁদাবাজি বা শিশু অপহরণের মতো অপরাধ নিয়ে মুখ খোলে না।

সেনাবাহিনীর উন্নয়নমূলক কাজ—স্কুল নির্মাণ, মেডিকেল ক্যাম্প, সেতু নির্মাণ, পুনর্বাসন—সব বাদ দিয়ে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোট পদক্ষেপকেও বড় করে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উপস্থাপন করে। অথচ যখন আঞ্চলিক দলগুলোর সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনা সদস্য, সাংবাদিক বা নিরীহ পাহাড়ি-বাঙালি নিহত হন, তখন তারা নিঃশব্দ থাকে।

🎭সুশীল সমাজের রোমান্টিক বিপ্লবভাবনা

দেশের তথাকথিত প্রগতিশীল ও সুশীল বুদ্ধিজীবী সমাজের একাংশ এখনও “ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মুক্তির লড়াই” নাম দিয়ে সশস্ত্র সহিংসতাকে রোমান্টিসাইজ করে। তাদের দৃষ্টিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা “জনগণের প্রতিনিধি”, আর সেনাবাহিনী “দখলদার”। এই দৃষ্টিভঙ্গির বিপজ্জনক পরিণতি হলো, জাতিগত বিভাজনকে তারা অজান্তেই উসকে দেয়।

📱সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারযুদ্ধ

বিদেশে পালিয়ে থাকা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ও তাদের ছাত্র শাখা VPN ব্যবহার করে ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটারে অপপ্রচার চালায়, যার উদ্দেশ্য সেনাবাহিনীকে ‘দমনকারী শক্তি’ হিসেবে তুলে ধরা। সেনাবাহিনীর অভিযানের ছবি বিকৃত করে গুজব ছড়ানো হয়। এমনকি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের নামেও জাল রিপোর্ট তৈরি করে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা চলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সক্রিয় তাদের ছাত্র শাখা এই প্রচারে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

🔴 মিডিয়ার অসততা ও অজ্ঞতা

দেশের কিছু প্রভাবশালী মিডিয়া ও সাংবাদিক পার্বত্য চট্টগ্রামের জটিল বাস্তবতা না বুঝে সেনাবাহিনীর ছোট ছোট পদক্ষেপকেও “মানবাধিকার লঙ্ঘন” হিসেবে প্রচার করে। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীর নিহত সদস্যদের, অপহৃত ও নির্যাতিত সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালির কথা তারা চুপচাপ এড়িয়ে যায়। আর তাদের এই দায়িত্বহীনতা সশস্ত্র সন্ত্রাসকে একপ্রকার বৈধতা এমনকি উৎসাহ প্রদান করে।

প্রশ্ন উঠতেই পারে—বাংলাদেশ কি অন্য দেশের চেয়ে ভিন্ন?

  • যদি ভারত মাওবাদী বা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা করে — প্রশংসা হয়।

  • পাকিস্তান সন্ত্রাসী হত্যা করলে — বাহবা পায়।

  • ইসরায়েল বা মিশর করলে — নিরাপত্তা রক্ষা বলে মানা হয়।

  • ইন্দোনেশিয়া পাপুয়ায় সেনা অভিযান চালিয়ে- আন্তর্জাতিক সমর্থন পায়।

তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন সমালোচনার মুখোমুখি হবে যখন তারা রাষ্ট্রদ্রোহী, অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ ও খুনি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়? এই প্রশ্নটি রাষ্ট্রীয় নীতি-নির্ধারকদের যেমন ভাবতে হবে, তেমনি সচেতন নাগরিকদেরও বুঝতে হবে—এই যুদ্ধ কেবল পাহাড়ে নয়, তথ্যযুদ্ধের ময়দানেও।

অপপ্রচারের জবাব চাই তথ্য ও দৃঢ় অবস্থানে

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ক নয়, বরং তারা উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও জাতীয় অখণ্ডতার রক্ষক, শান্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী তথ্যভিত্তিক প্রতিরক্ষা কৌশল নিতে হবে, আন্তর্জাতিকভাবে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার তুলে ধরার প্রবণতা প্রতিহত করতে হবে, তথ্যভিত্তিক যুক্তির মাধ্যমে। আর জনগণকে সচেতন থাকতে হবে—কে পাহাড়ে শান্তি চায়, আর কে আগুন লাগাতে চায়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।