চাঁদার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীকে মারধর, রাজস্থলীতে আ.লীগ নেতার ৬ মাসের জেল

চাঁদার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীকে মারধর, রাজস্থলীতে আ.লীগ নেতার ৬ মাসের জেল

চাঁদার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীকে মারধর, রাজস্থলীতে আ.লীগ নেতার ৬ মাসের জেল
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

আরাকান আর্মির নেতা রেনিন সু’কে নাগরিক সনদ দিয়ে আলোচিত হন তিনি

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটির রাজস্থলীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীকে ধরে নিয়ে ২০ লাখ টাকার জন্য বেধড়ক মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় অভিযুক্ত হয়ে রাজস্থলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমাকে (২০) দোষী সাব্যস্ত করে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

সোমবার (২৬ মে) দুপুরে রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসিফ এই রায় দেন। এই মামলা থেকে গাইন্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পুচিমং মারমা (৪৫), স্থানীয় হেডম্যান উথিন চিং মারমা (৫০) ও স্থানীয় দোকানি সঞ্জয় বণিককে (৪২) খালাস দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী ও রাঙামাটি জজকোর্টের আইনজীবী মো: শাহ আলম। তিনি বলেন, রাজস্থলীতে সনাতনী সম্প্রদায়ের সংখ্যাঘু ব্যবসায়ী যীশু সাহাকে (৪৫) গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমা। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা না দিলে তাকে গুম করে করে ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করে নেওয়া হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।

২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজস্থলী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ঘটনাটি ঘটে। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতে বাদী হয়ে চার জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন ভুক্তভোগী যীশু সাহা। পরে আজ সোমবার রাঙামাটির চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন।

দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, গেল ৩ ফেব্রুয়ারি একটি চিঠি ইস্যু করে উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমা। সেখানে বলা হয় আমার বিরুদ্ধে সঞ্জয় বণিক ও সাজু বণিক নামে দুই ব্যক্তি একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা পরিষদে একটি জরুরি সভা ডাকা হয়। কিন্তু সেই দিন আমি জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলাম।

বিষয়টি তাদের জানানো হয়। এরপর দিন ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা ২০ মিনিটে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভবনের বৈঠকখানায় সবাই মিলে বসি। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া মাত্রই উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমার আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজা করেন।

একই নির্দেশ দেন ইউপি চেয়ারম্যান পুচিং মং মারমা ও ২৩২৮ নম্বর মৌজার হেডম্যান উথিন চিং মারমাকে। তারা সবাই মিলে আমাকে পিলারের সঙ্গে বেঁধে বেদম প্রহার করেন। পরে আমার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। জানানো হয়, এই টাকা না দিলে আমাকে গুম করা হবে। জবর দখল করা হবে আমার ব্যবসা বাণিজ্য।

এ রায়ে অসন্তুষ্ট হওয়ার বিষয়টি জানান, আসামি পক্ষের আইনজীবী জীবন চাকমা। তিনি বলেন, রাঙামাটির চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত উবাচ মারমাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। বাকি তিনজনকে খালাস দিয়েছেন। এই রায়ে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই। তাৎক্ষণিক জামিনের আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন। এই রায়ের বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রাজস্থলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান উবাচ মারমা এর আগে গাইন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করাকালে মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির বহুল আলোচিত নেতা ডা: রেনিন সু’কে নাগরিক সনদ দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন আ:লীগ নেতা উবাচ মারমা।

২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট রাতে রাজস্থলীর কলেজ পাড়া থেকে একটি বিলাস বহুল পাকা ভবনে অভিযান চালিয়ে আরাকান আর্মির সদস্য অংনু ইয়ান রাখাইনকে এবং পরদিন বাড়ির কেয়ারটেকার জসু অং মারমা ও অং সু অং মারমাকে যৌথ বাহিনী আটক করে।

ঘটনার এক মাস পর ১৪ অক্টোবর বিজিবি ও পুলিশের পৃথক অভিযানে রাজস্থলীর ইসলামপুর থেকে আটক করা হয় পালিয়ে থাকা আরাকান আর্মি নেতা ডা. রেনিন সো কে। রেনিন সো বাংলাদেশ, মায়ানমার ও নেদারল্যান্ড এই তিন দেশের নাগরিক বলে সেসময় অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

পরবর্তীতে একাধিক স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের ছদ্মাবরণে থাকা উবাচ মারমার পরিবারের সদস্য তারই আপন ছোট ভাই মায়ানমারের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।