বাঘাইছড়িতে বাঙ্গালি যুবকদের ওপর হামলার ঘটনায় উত্তেজনা: গুজব ছড়াচ্ছে জেএসএস
![]()
নিউজ ডেস্ক
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার ৩২ নম্বর ইউনিয়নের এ্যাতগাত্যে (মিলনপুর) গ্রামে গতকাল সোমবার (৯ জুন) বিকাল ৪টায় তিনজন বাঙ্গালি যুবককে ঘিরে সংঘটিত একটি বিতর্কিত ঘটনায় পাহাড়ি-বাঙ্গালি সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্য ফের আলোচনায় এসেছে। ঘটনাটিকে ঘিরে প্রচারিত বিবরণ ও পাল্টা দাবি ঘোলাটে পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে, যার পেছনে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মো. সজীব (২৫), মো. আল-আমিন (২৩) ও মো. সাইদুল ইসলাম ওরফে শহিদুল্লাহ (২২) — এই তিন যুবক ঈদের ছুটিতে সীমান্ত সড়ক ধরে ঘুরতে বের হন। তখন স্থানীয় পাহাড়ি এক কিশোরীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে তাদের আটক করে একদল পাহাড়ি যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, এরপর উত্তেজিত জনতা তিন যুবককে গণধোলাই দেয় এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মধ্যস্থতায় শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেয়।
এই ঘটনার পরপরই আঞ্চলিক সংগঠন — জেএসএস — সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনাটিকে ‘বাঙ্গালিদের দ্বারা পাহাড়ি কিশোরীর যৌন নির্যাতন’ হিসেবে প্রচার করে। বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ছড়ানো হয়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমঝোতায় পৌঁছালেও সামাজিক মাধ্যমে গুজব ও বিদ্বেষ ছড়ানো বন্ধ হয়নি।
অভিযুক্ত যুবকদের স্বজনদের পাল্টা অভিযোগ, এটি সম্পূর্ণরূপে একটি পূর্বপরিকল্পিত নাটক। তারা দাবি করেন, “একদল সশস্ত্র উপজাতি যুবক আমাদের ছেলেদের পথরোধ করে, মোবাইল ফোন, মোটরসাইকেল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং চরমভাবে নির্যাতন করে। পরে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে কিশোরীকে সামনে রেখে মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করানো হয়।”
স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের মতে, “এই ঘটনা পরিকল্পিতভাবে সীমান্ত সড়কের কাজ ব্যাহত ও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ঘটানো হতে পারে।” এর পেছনে সরাসরি জেএসএস-এর ভূমিকাও অস্বীকার করা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
একজন স্থানীয় বিশ্লেষক বলেন, “জেএসএস ও সমমনা সংগঠনগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বারবার উন্নয়ন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। প্রতিবার কোনো সরকারি কর্মসূচি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেই তারা গুজব, নাটক বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে। এই ঘটনাও সেই প্রবণতার ধারাবাহিকতা হতে পারে।”
এই পরিস্থিতিতে সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জোরালো হচ্ছে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, ঘটনা যাই হোক, এর নেপথ্য উসকানি ও উদ্দেশ্য অনুধাবন করাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অসত্য প্রচারণা পাহাড়ে দীর্ঘমেয়াদি সহাবস্থানের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সত্য উদঘাটনের স্বার্থে যথাযথ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা এবং সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সহনশীলতা বজায় রাখার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।