খাগড়াছড়িতে সড়কের জায়গা দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দুদকের অভিযান
![]()
নিউজ ডেস্ক
সড়কের সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান—এমন অভিযোগে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের চেঙ্গী ব্রিজ সংলগ্ন এক রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়েছে দুদক রাঙামাটি সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন দুদকের রাঙামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আহমদ ফরহাদ হোসেন, খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান এবং অভিযুক্ত রেস্টুরেন্টের মালিক কেমি চাকমা।
দুদকের সহকারী পরিচালক জানান, “৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি দল সরেজমিনে এসে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে। প্রমাণ পাওয়া গেলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।” অভিযুক্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির মালিক কেমি চাকমা বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সঠিক সার্ভে রিপোর্ট পেলে যদি বাড়তি অংশ দখলের প্রমাণ মেলে, তবে তা সরিয়ে নিতে আমরা প্রস্তুত।”
সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুর রহমান জানান, “সড়কের জায়গা দখলের অভিযোগে নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। এটি আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। তবে অভিযানে দুদকের সঙ্গে যৌথভাবে অংশ নিয়েছি আমরা।”
তবে অভিযানের সময় সড়কের বিপরীত পাশে বহুল আলোচিত ‘হোটেল গ্রীণ স্টার’—যা নিয়ে বহুদিন ধরে সড়ক দখল ও পাহাড় কাটা সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে—সেখানে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। হোটেলটির মালিক জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সরকারি দলের ক্ষমতাধর এই নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন নীরব। হোটেল নির্মাণের সময় সড়কের একাংশ জবরদখল এবং পাহাড় কাটার ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও আজ পর্যন্ত কোনো অভিযান বা তদন্তের মুখোমুখি হননি তিনি।
সুশাসনের প্রশ্নে এখানেই তৈরি হচ্ছে দ্বৈতনীতি—একদিকে সাধারণ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও নোটিশ, অন্যদিকে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয়তা।
দুদকের এ ধরনের একচোখা তৎপরতায় সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাঁরা বলছেন, “দুর্নীতি প্রতিরোধে রাজনৈতিক পরিচয় নয়, সমানভাবে সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। নইলে এটি পক্ষপাতদুষ্ট প্রশাসনিক আচরণ হিসেবেই গণ্য হবে।”
খাগড়াছড়ির নাগরিক সমাজের এক সদস্য বলেন, “একটি সরকারি সংস্থার জায়গা কেউ দখল করে যদি বহুতল হোটেল বানাতে পারে এবং সেখান থেকে ব্যবসা চালাতে পারে, তবে সাধারণ মানুষ কীভাবে বিশ্বাস করবে যে আইন সবার জন্য সমান?”
খাগড়াছড়িতে দুদকের অভিযান, একদিকে আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ হলেও, রাজনৈতিক ছায়া এড়িয়ে ন্যায়বিচারের পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।