সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিজ বাড়িতে ফিরলেন কেএনএফের অত্যাচারে পালিয়ে যাওয়া বম পরিবার
![]()
নিউজ ডেস্ক
দীর্ঘ এক বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিজ গ্রামে ফিরে গেলেন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর সশস্ত্র সহিংসতার শিকার এক বম পরিবার।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার থানচি উপজেলার সীমান্তবর্তী রেমাক্রী প্রাংসা ইউনিয়নের থান্দুইপাড়া (বমপাড়া) এলাকায় সেনাবাহিনীর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়নের আওতাধীন ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সহায়তায় এই পরিবারটির নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা হয়।
এদিন দুপুরে পরিবারটি থান্দুইপাড়ায় পৌঁছালে, স্থানীয় সেনা ক্যাম্পের পক্ষ থেকে তাদের স্বাগত জানানো হয়। সেনাবাহিনীর বাকলাই পাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা পরিবারটিকে নিয়ে পাড়াবাসীর জন্য সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করেন।

পাশাপাশি ফিরিয়ে আনা পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা, প্রাথমিক চিকিৎসা সহায়তা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ করা হয়।
সহায়তার মধ্যে ছিল; চাল ১০ কেজি, আটা ৩ কেজি, চিনি ২.৫ কেজি, তেল ২ কেজি, ডাল ২ কেজি, লবণ ১ কেজি, চা-পাতা ১ কেজি ও মসলা সামগ্রী।
নিপীড়নের ইতিহাস ও প্রত্যাবর্তনের গল্প
থান্দুইপাড়া পাড়ার কারবারি জানান, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে কেএনএফ-এর সশস্ত্র সদস্যদের লাগাতার অত্যাচার, হুমকি ও নিপীড়নের মুখে গ্রামের অনেক পরিবার নিরাপত্তার অভাবে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ওই সময় নিজেদের জীবন রক্ষা করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, “পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ১৯ মার্চ ২০২৫ তারিখে প্রথম দফায় পাঁচটি পরিবারের মোট ২৩ জন সদস্য থান্দুইপাড়ায় ফিরে আসেন। আমরা ধীরে ধীরে আবার পাড়াটি পুনর্গঠন শুরু করি। আজকের এই পরিবারটির ফিরে আসা আমাদের নতুন আশা ও সাহস জোগাবে। আমরা বিশ্বাস করি, সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পাড়াটিকে আবার আগের মতো শান্তিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে পারবো।”

একটি পরিবারের প্রাণভরা স্বস্তি
ঘরে ফিরে আসা লাল বিয়াক সাং বম (৪০) জানান, “দীর্ঘ এক বছর আমরা পাড়ার দিকে ফিরেও তাকাতে পারিনি। কেএনএফ-এর সন্ত্রাস, ভীতি আর অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিল আমাদের জীবন। আজ সেনাবাহিনীর কারণে আমরা নিজভূমে, নিজের ঘরে ফিরতে পেরেছি—এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”
সেনাবাহিনীর প্রতিশ্রুতি: পুনর্বাসন ও নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সহায়তা
সেনাবাহিনীর ১৬ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক জানান, “বম জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবর্তন, পুনর্বাসন ও মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা সক্রিয় থেকেছে এবং থাকবে। আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা ও খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান অঙ্গীকার। কেউ যেন আর ভীত হয়ে এলাকা ছাড়তে না হয়—সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।”
প্রসঙ্গত,গত কয়েকবছর ধরে বান্দরবান অঞ্চলে কেএনএফ-এর সহিংসতা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রধারী দখলদারিত্বের ফলে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। বহু বম, ম্রো ও খুমি পরিবার এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক উপস্থিতি ও মানবিক সহায়তার ফলে বর্তমানে এলাকাগুলোতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে।
থান্দুইপাড়ার মতো প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় একটি পরিবার ফিরে আসার ঘটনা শুধু একটি মানবিক পুনর্বাসনের নিদর্শন নয় বরং এটি সেনাবাহিনীর সুশৃঙ্খল ও জনগণমুখী ভূমিকার প্রমাণ। এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুপ্রেরণাও—যেখানে সেনাবাহিনী শুধু অস্ত্র নয়, হৃদয় নিয়ে দাঁড়ায় জনগণের পাশে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।