চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনভিপ্রেত, বাস্তবায়িত হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ ধারা

চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনভিপ্রেত, বাস্তবায়িত হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ ধারা

চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনভিপ্রেত, বাস্তবায়িত হয়েছে দুই-তৃতীয়াংশ ধারা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

ডেস্ক রিপোর্ট

দুই যুগ ধরে চলমান পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আবারও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চাপ তৈরির অপচেষ্টা করা হয়েছে রাজধানীর একটি আলোচনা সভায়।

ধানমন্ডির উইমেন্স ভলান্টারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সভায় “আদিবাসী” শব্দ ব্যবহার করে সংবিধান, রাষ্ট্রনীতি ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ওই সভায় শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে, তা একপাক্ষিক, বিভ্রান্তিকর ও পরিপূর্ণ তথ্য বিবর্জিত বলে মনে করছেন পার্বত্য অঞ্চলের বিশ্লেষকরা।

বাস্তবতা: শান্তিচুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত

সরকারি তথ্য ও বিশেষজ্ঞ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পার্বত্য শান্তিচুক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধারা ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, যার সরাসরি সুফল ভোগ করছে পার্বত্য অঞ্চলের জনগণ—বিশেষ করে যারা চুক্তির অন্যতম সুবিধাভোগী।

চুক্তি অনুযায়ী গঠিত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, ভূমি কমিশন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের খসড়া, জেলা প্রশাসনের কিছু দায়িত্ব হস্তান্তর, সমন্বয় মন্ত্রণালয় গঠনসহ বহু মৌলিক কাঠামো।

সুবিধা ভোগ করেও অভিযোগ!

চুক্তির সুবিধার মাধ্যমে জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে প্রতিমন্ত্রী মর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদ আঁকড়ে আছেন। অথচ তিনিই ও তার সমর্থকরা চুক্তি বাস্তবায়নে ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব’ দেখছেন। বাস্তবে তিনি নিজেই দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে নিজ পদের মেয়াদ বারবার বাড়িয়ে নিচ্ছেন—এমন অভিযোগ স্থানীয় পাহাড়ি জনগণের মধ্যেই রয়েছে।

এছাড়া চুক্তিতে জনসংহতি সমিতির জন্য একমাত্র শর্ত, অস্ত্র এখনো পরিহার করেনি জেএসএস।

 “আদিবাসী” শব্দের ব্যবহার: সংবিধান ও আদালতের তোয়াক্কা কোথায়?

আলোচনায় উপস্থিত সরকারের ঘনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিমালাকে পাশ কাটিয়ে বারবার “আদিবাসী” শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা সুপ্রিম কোর্ট ও সংসদীয় সিদ্ধান্তে স্পষ্টভাবে “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” হিসেবে ব্যবহারযোগ্য শব্দের পরিপন্থী। প্রশ্ন উঠেছে—সরকারের অংশীজনদের উপস্থিতিতে আয়োজিত এমন সভায় সংবিধান ও আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কীভাবে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়? এতে দেশে বিভাজনমূলক পরিচয় রাজনীতিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেই আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।

 প্রশ্ন রইল:

  • শান্তিচুক্তির সুবিধা ভোগ করে বছরের পর বছর নেতৃত্বে থেকে বাস্তবায়ন নিয়ে যারা অভিযোগ করছেন, তারা কি প্রকৃত শান্তি চান, নাকি ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার কৌশল নিয়েই ব্যস্ত?

  • সংবিধান বহির্ভূত পরিভাষা ব্যবহার করে জাতি, ধর্ম ও গোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা কি সচেতন ষড়যন্ত্র নয়?

  • শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের নামে একচেটিয়া স্বার্থ নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কি চুক্তির চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে না?

মোটকথা, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথ সুদূরপ্রসারী হলেও অগ্রগতি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অবশিষ্ট ধারাসমূহ বাস্তবায়নে সময়, প্রশাসনিক জটিলতা ও স্থানীয় জনমত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য হলেও তা নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চাপ সৃষ্টির অপচেষ্টা অনভিপ্রেত ও বিভ্রান্তিকর।

সরকারের নীতি অনুযায়ী পাহাড়ে বসবাসরত জনগণ “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” এবং এর ব্যত্যয় রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংবিধানের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed