পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে অযথা কান্নাকাটি নয়, আত্মসমালোচনার সময় এখন
![]()
মো. সাইফুল ইসলাম
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির বয়স এখন দুই যুগ পেরিয়ে গেছে। এতদিন পর এসে ‘চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি’, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব’, কিংবা ‘আদিবাসীর অধিকার’—এই পুরনো অ্যালবাম থেকে ধুলোমাখা বুলি ঝেড়ে আবার সামনে আনা হচ্ছে। ঢাকায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন এসব দাবি তোলেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সত্যিই কি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি? নাকি কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণের সামনে অর্ধসত্য ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য এই অভিযোগগুলো বারবার পুনরাবৃত্তি করছেন?
সরকারি হিসাবেই বলা হয়েছে—চুক্তির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ধারা ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত হয়েছে। যে চুক্তিকে কেন্দ্র করে দাবি-দাওয়া, বিদেশ সফর, সম্মান, আর্থিক সুবিধা এবং প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা সবই ভোগ করছেন সন্তু লারমা, সেই চুক্তিকেই আজ আবার প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজেদের দায় থেকে পালাতে চাচ্ছেন এই সুবিধাভোগী নেতারা।
চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন, প্রশাসনিক ক্ষমতা হস্তান্তরসহ বহু কাঠামো তৈরি হয়েছে এবং পাহাড়ের জনগণ তার সুফল ভোগ করছেন। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কার জন্য চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি এবং কেন?
আসলে বাস্তবায়নের দায় চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অপচেষ্টা আজ জনমানুষের কাছেই স্পষ্ট। সন্তু লারমা দুই যুগ ধরে আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বসে, নিজের দলের বাইরে কাউকে নেতৃত্বে আসতে দেননি। পাহাড়ে শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতি দমনে বর্বর হিংসা চালানো হয়েছে, ইউপিডিএফের উত্থান তারই ফল।
এতকিছুর পরেও ‘সন্তু লারমা চুক্তি বাস্তবায়ন চান’—এই দাবি হাস্যকর এবং জনবিচ্ছিন্ন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যু হলো—“আদিবাসী” শব্দের ব্যবহার। বাংলাদেশের সংবিধান, সংসদ ও উচ্চ আদালত বারবার বলে দিয়েছে—এ দেশের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে “ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী” নামে অভিহিত করতে হবে। কিন্তু তথাকথিত নাগরিক সমাজ, এনজিও এবং কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এই পরিভাষার তোয়াক্কা না করে সংবিধান লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন, যেন এটিই তাদের অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল।
একটি গোষ্ঠী বছরের পর বছর চুক্তির সুবিধা ভোগ করবে, আবার সেই চুক্তিকেই ধোঁয়াশায় ফেলে দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করবে—এ কেমন নীতি? এই তথাকথিত “চুক্তিপন্থীদের” দায়িত্ব ছিল পাহাড়ে শান্তি, উন্নয়ন ও সহাবস্থানের ভিত্তি রচনা করা। বাস্তবে তারা তা না করে আজো পাহাড়ে ভয়, বিভাজন ও নিজ নিজ প্রভাব বলয়ের রাজনীতি চর্চা করছেন।
এখন সময় আত্মসমালোচনার
সরকারের উচিত—যারা চুক্তির বাস্তবায়ন চায় না, অথচ বারবার তা নিয়ে জনমনে ভুল বার্তা ছড়ায়, তাদের স্বার্থান্বেষী ভূমিকা চিহ্নিত করে চুক্তি বাস্তবায়নের পথকে সুনির্দিষ্ট সময়সীমায় এগিয়ে নেওয়া। পাহাড়ে বসবাসকারী জনগণের উচিত নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং চুক্তিকে আত্মিকভাবে গ্রহণ করে বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া।
চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে কান্নাকাটি নয়, এখন সময় আত্মসমালোচনার এবং সত্য বলার।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।