আইসিজিতে গনহত্যা মামলার শুনানীর আগে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের কক্সবাজার সফর, কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা
 
                 
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের কক্সবাজারের আশ্রয় নেয়া ও এর আগে বিভিন্ন সময়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে বাংলাদেশ সহ আন্তর্জাতিক মহলের বারবার চেষ্টা ও অনুরোধের পরেও তাতে আশানুরুপ সাড়া দেয়নি মিয়ানমার সরকার। তবে এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও গনহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিার দায়ের করা মামলার পর কিছুটা নড়ে চড়ে বসেছে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এই দেশটি। নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় মামলা চালিয়ে যাবার ঘোষনা দিলেও এবার মামলার প্রথম শুনানীকে সামনে রেখে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাতে চেয়ে প্রতিনিধিদলের সফরের আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে গত ২১ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে মিয়ানমার। তবে মিয়ানমার এ সিদ্ধান্তকে অনেকটা কৌশল হিসেবে নিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি চূড়ান্ত করেনি বলে জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তাদের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানোর পাশাপাশি রাখাইনে নৃশংসতার জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের (আইসিওই) একটি প্রতিনিধিদলকেও বাংলাদেশে পাঠাতে চাইছে। ওই কমিশনকে কক্সবাজার সফরের অনুমতি দিতে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক একটি প্রভাবশালী দেশ বাংলাদেশকে কয়েকবার অনুরোধও করেছে বলেও জানা গেছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ক বাংলাদেশী গবেষনা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক আদালতে নিজেদের করা অপরাধের মামলায় ১ম শুনানীর আগে মিয়ানমার সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এটা জানাতে চাচ্ছে যে, “রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে তারা তৎপর।” এর আগেও বেশ কয়েকবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতি পর্যায়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আগে মিয়ানমার এ ধরনের প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করেছে।
এর আগে, নেদারল্যান্ডদের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে গত ১১ নভেম্বর মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করে গাম্বিয়া। এতে সমর্থন দিয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং কানাডা। আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার করা গণহত্যার মামলার শুনানি আগামী ডিসেম্বরের ১০ থেকে ১২ তারিখ হতে যাচ্ছে বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে মিয়ানমার সরকার কর্তৃক গঠিত স্বাধীন তদন্ত কমিশনের (আইসিওই) ভূমিকা নিয়েও আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ফিলিপাইনের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রোজারিও মানালোর নেতৃত্বাধীন এই কমিশনটিকে মিয়ানমার সরকারের নির্দেশিত বলে ধরা হয়। কারণ, গঠিত হবার প্রায় দেড় বছরে এখন পর্যন্ত কমিশন মাত্র একবার সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখতে রাখাইনে গেছে। এছাড়া কমিশন এখনো পর্যন্ত কক্সবাজারের শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বক্তব্য জানতে চায়নি। কাজ শুরুর পর কমিশন মূলত নিজেদের মধ্যে বৈঠক, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং, স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সময় পার করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসীদের হামলার অজুহাত দেখিয়ে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চরম নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেসময় সীমান্ত পেরিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। এর পূর্বেও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
