মিয়ানমার সংকটে মোড় ঘোরাচ্ছে ভারত, প্রধান কূটনৈতিক মিজোরাম
![]()
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারে জান্তা সরকারের প্রভাব কমতে থাকায় দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনে ভারতের নতুন নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা নিচ্ছে প্রতিবেশী রাজ্য মিজোরাম। মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সক্রিয় বিভিন্ন জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে ভারতের পক্ষ থেকে গোপন কূটনৈতিক যোগাযোগে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করছেন মিজোরামের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিকরা।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, বর্তমান মিজো মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা এবং তাঁর পূর্বসূরি ও মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট নেতা জোরামথাঙ্গাকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মিজোরামের প্রভাবশালী দুটি সামাজিক সংগঠন—ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশন (YMA) এবং জো রিইউনিফিকেশন অর্গানাইজেশন (ZORO)—এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত।
শান্তির উদ্যোগে মিজো মুখ্যমন্ত্রীর ‘অ্যাডভোকেসি গ্রুপ’
জানা গেছে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী গত সপ্তাহে ‘চিনল্যান্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে’ একটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ গঠন করেছেন। এই গ্রুপের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠী—চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (CNF) ও ইন্টারিম চিন ন্যাশনাল কনসালটেটিভ কাউন্সিল—এর মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও এ ধরনের একটি আলোচনার আয়োজন করেছিলেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী।
সমঝোতার পর দুই চিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘চিন জাতি’ গঠনের লক্ষ্যে একটি যৌথ সংবিধান খসড়া কমিটি গঠন করেছে।
আরাকান আর্মিকে কাছে টানার কৌশল
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে রাখাইন রাজ্য নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিশালী বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (AA)। রাখাইন ভারতের সঙ্গে সীমান্ত না থাকলেও ভৌগোলিকভাবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানেই অবস্থিত ভারতের বহু প্রতীক্ষিত ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট’ (KMMT) প্রকল্পের প্রবেশদ্বার—সিত্তুই বন্দর।
সিত্তুই শহর এখনো জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তার আশপাশের অঞ্চল আরাকান আর্মির দখলে। ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের জন্য AA-এর সমর্থন এখন অপরিহার্য।
তবে ১৯৯৮ সালের বিতর্কিত ‘অপারেশন লিচ’-এর কারণে আরাকান আর্মির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই আস্থাহীনতায় ভরপুর। ওই অভিযানে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী AA-এর বহু নেতাকে হত্যা করেছিল এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছিল। AA এখনো এই অভিযানে ভারতকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ মনে করে।
এই প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরোধে মিজো নেতারা বিশেষত জোরামথাঙ্গা, যারা একসময় নিজেও সশস্ত্র বিদ্রোহী ছিলেন, AA-এর সঙ্গে আস্থা পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করছেন। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি Aizawl-এ AA নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে।
মিজোরামে বিদ্রোহী কার্যালয়!
এই আলোচনার ফলশ্রুতিতেই AA সম্প্রতি মিজোরামে একটি ‘প্রতিনিধি কার্যালয়’ স্থাপন করেছে, যা ভারত-মিয়ানমার সম্পর্কের জটিলতায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এছাড়া চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টেরও মিজোরামে গোপন কার্যালয় রয়েছে বলে জানা গেছে।
পালেটও নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা
মিজো নেতারা এখন পালেটও শহরকে ঘিরে AA ও CNF-এর মধ্যে চলমান বিরোধ মেটাতেও মধ্যস্থতা করছেন। পালেটও শহরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং বর্তমানে AA এর নিয়ন্ত্রণে। সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে Aizawl-এ আয়োজিত এক বৈঠকে CNF-এর উপ-সভাপতি থাং ইয়েন এবং AA প্রধান টুয়ান ম্রাত ন্যাংসহ উভয়পক্ষের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। যদিও আলোচনাটি এখনও নিষ্পত্তিমূলক হয়নি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা যেভাবে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির সরাসরি অংশ হয়েছিল, দীর্ঘকাল পর মিজোরামও তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় উঠে এসেছে। ভারতের মিয়ানমার কৌশলে এই উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এখন কেন্দ্রের ‘সাইলেন্ট কূটনীতির’ প্রধান নিয়ামক। এর মাধ্যমে ভারত চাচ্ছে, জান্তা সরকার, চিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে একযোগে ভারসাম্য রক্ষা করে আবারও সক্রিয় করতে কালাদান প্রকল্প, যা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পূর্বে পরিত্যক্ত মিয়ানমার-কেন্দ্রিক বিকল্প পথ খোলার চেষ্টা।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।