‘সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও বৈষম্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে’

‘সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও বৈষম্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে’

‘সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও বৈষম্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে’
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির দাবি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০ সংশোধন করে প্রস্তাবিত ‘জাতি বৈচিত্র্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়নের প্রতিবাদে বান্দরবানে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)।

রবিবার বান্দরবান জেলা কার্যালয় সংলগ্ন মুসাফির পার্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পার্বত্য অঞ্চলের বৈষম্য নিরসনের আশ্বাস দিলেও এখন তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকার গঠনের একবছরের মধ্যেই সংস্কার কমিশন ও কতিপয় উপদেষ্টার মাধ্যমে একের পর এক বিতর্কিত ও সংবিধানবিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে প্রান্তিক করে তুলবে।”

তিনি আরও বলেন, ২৩ জুন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন’ সংশোধন করে নতুনভাবে ‘জাতি বৈচিত্র্য ইনস্টিটিউট’ নামকরণ এবং ৬ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে ৬ জনকেই নৃ-গোষ্ঠীভুক্ত রাখার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা একচেটিয়া গোষ্ঠী প্রাধান্য ও সাংবিধানিক ভারসাম্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র।

সংবাদ সম্মেলনে পিসিএনপি দাবি করে, এই আইনি পরিবর্তন এবং সুপ্রদীপ চাকমার আদিবাসী পরিচয়ের পক্ষে বক্তব্য সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। ‘নৃ-বৈচিত্র্য’ বা ‘জাতি বৈচিত্র্য’ শব্দচয়নকে তারা কৌশলগতভাবে আদিবাসী স্বীকৃতির ভিত্তি তৈরির অপচেষ্টা বলে আখ্যা দেন।

কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, “উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা দায়িত্ব গ্রহণের পর মন্ত্রণালয়ের ৯০ শতাংশ বরাদ্দ এমনভাবে বণ্টন করেছেন, যাতে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব নিশ্চিত হয়। অতীতে তিনি রাষ্ট্রদূত ও পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকাও পালন করেছেন। এখন নতুন সরকারে থেকেও সেই পুরনো বৈষম্যমূলক রাজনীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীও একইভাবে সংবিধানবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা উভয়ে যে সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছেন, তা ভবিষ্যতে জাতিগত দাঙ্গা ও পার্বত্য অস্থিতিশীলতার পথ প্রশস্ত করবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা সুস্পষ্টভাবে বলেন, “সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামকে সংঘাত ও বৈষম্যের দিকেই ঠেলে দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামাজিক সহাবস্থান, সাংস্কৃতিক ভারসাম্য ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”

পিসিএনপি তাদের দাবিসমূহ তুলে ধরে অবিলম্বে প্রস্তাবিত আইন বাতিল, বিতর্কিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী ও সুপ্রদীপ চাকমার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। পাশাপাশি তারা জানিয়ে দেয়, “সরকার যদি এসব দাবি উপেক্ষা করে, তবে বৃহত্তর গণ-আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পিসিএনপি বান্দরবান জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল আলম, এম. রুহুল আমিন, হাজী আবদুস শুক্কুর, আবদুল আলীম মনু, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. শাহজালাল, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার, ছাত্র পরিষদ সভাপতি মো. আসিফ ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক হাবীব আল মাহমুদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, প্রস্তাবিত ‘জাতি বৈচিত্র্য’ অধ্যাদেশ এবং ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির প্রশ্নে পাহাড়ে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, যার প্রতিক্রিয়ায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।