নাহিদ ইসলাম ও 'আদিবাসী' চাতুরী: এক অসাংবিধানিক বিপদসংকেতের বিরুদ্ধে সতর্ক হোন!

নাহিদ ইসলাম ও ‘আদিবাসী’ চাতুরী: এক অসাংবিধানিক বিপদসংকেতের বিরুদ্ধে সতর্ক হোন!

নাহিদ ইসলাম ও 'আদিবাসী' চাতুরী: এক অসাংবিধানিক বিপদসংকেতের বিরুদ্ধে সতর্ক হোন!
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

রাঙামাটির উগ্রপন্থী সাংবাদিক হিমেল চাকমার মাধ্যমে আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলামের একটি ভিডিও। সেখানে তাকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ আখ্যায়িত করতে দেখা গেছে—এমন এক শব্দ ও ধারণা, যা সরাসরি বাংলাদেশের সংবিধান, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং একক জাতিসত্তার ধারণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

নাহিদ ইসলামের মতো সদ্য রাজনীতিতে আসা একজন নেতার মুখে এ ধরনের শব্দচয়ন নিছক অজ্ঞতা নয়, বরং সচেতন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। কারণ, তিনি জানেন—‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি শুধুই একটি শব্দ নয়; এটি একটি বহুমাত্রিক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক দাবি, যার পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি গোষ্ঠীবিশেষ, কিছু এনজিও, কিছু মিডিয়া, এবং কিছু বিদেশি মিশনারির দীর্ঘমেয়াদি ‘জাতি বিভাজন’ এজেন্ডা।

নাহিদ ইসলাম ভিডিওতে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হচ্ছে—বাংলাদেশে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতি দেওয়া হোক এবং তাদের আলাদা জাতিসত্তা মেনে নেওয়া হোক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে কি হিন্দু, বড়ুয়া, ও বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যারা ধর্মে ভিন্ন, তাদেরও জাতিগতভাবে আলাদা করে পরিচিত করতে হবে? যদি না হয়, তাহলে চাকমা, মারমা, সাঁওতালদেরও কেন—“বাংলাদেশি বাঙালি” পরিচয়ে সমর্পিত নয়?

নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্য সরাসরি দেশের একক জাতিসত্তা ও সংবিধানবিরোধী। আমাদের সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে—“রাষ্ট্রের জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালি এবং নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিক হইবে।” কাজেই ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার শুধু বেআইনি নয়, এটি বিভাজনমূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিপজ্জনক।

এই প্রশ্নটা এখন আমাদের সবাইকে করতে হবে। কারণ, যারা ‘আদিবাসী’ শব্দকে সামনে এনে পাহাড়ে আলাদা রাষ্ট্র, আলাদা স্বায়ত্তশাসন বা ভিন্ন জাতিসত্তা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন, তারা ১৯৭১-এর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেতনার ঘোরবিরোধী। তারা চায় এক বহুজাতিক রাষ্ট্র—যেখানে বিভক্ত জাতিসত্তা, স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল এবং সংবিধানের বাইরে দাঁড়িয়ে একটি ভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে উঠুক।

যাদের এই আন্দোলনের নেতৃত্বে দেখা যায়—তারা কেউই সত্যিকারের নিপীড়নের শিকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। বরং এদের কেউ কেউ পাহাড়ে সশস্ত্র গ্রুপের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করেন, কেউ আবার বিদেশি দাতাদের তহবিলে প্রজেক্ট বানিয়ে ‘আদিবাসী শিল্প’ তুলে ধরেন, কিন্তু তাদের পেছনে থাকে একটি সুপরিকল্পিত সন্ত্রাসবাদী নীলনকশা।

এখানে “প্রথম আলো”, “ডেইলি স্টার”, কিছু বাম সংগঠন ও আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকাও প্রশ্নের বাইরে রাখা যায় না। বারবার তাদের রিপোর্টে ও বিবৃতিতে “আদিবাসী” শব্দটির ব্যবহারে এই ষড়যন্ত্রের লেজ বেরিয়ে আসে। এরা হয়তো মানবাধিকারের কথা বলে, কিন্তু আদতে এই তথাকথিত ‘অধিকার’-এর ভেতর দিয়ে রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও জাতিগত সংহতির ভিত নষ্ট করার কাজ করে চলে।

নাহিদ ইসলামের মতো ব্যক্তিদের এমন বক্তব্য যদি বিচারহীনতার সুবিধা পায়, তাহলে ভবিষ্যতে আরো অনেকে এই সাহস দেখাবে। আজ যদি ‘আদিবাসী’ পরিচয় মেনে নেওয়া হয়, কাল হয়তো আলাদা প্রশাসনিক অঞ্চল, আলাদা বিচারব্যবস্থা, এমনকি আলাদা পতাকা বা সংবিধানের দাবিও উঠবে। সুতরাং, এই বিষয়টিকে শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

প্রয়োজন—একটি রাষ্ট্রীয় অবস্থান। রাষ্ট্রকে এখনই ঘোষণা দিতে হবে—“আদিবাসী” শব্দের কোনো ব্যবহার আইনসম্মত নয় এবং এটি প্রতিরোধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে জাতিসত্তা প্রশ্নে কোনো বিভেদ সৃষ্টিকারী বক্তব্য, প্রপাগান্ডা বা রাজনৈতিক চাতুরীর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে শান্তি রক্ষায় কাজ করছে, হাজারো শহীদ দিয়েছে। তারা কখনোই চায়নি—এই ভূমিতে বিভাজন হোক। আর এখন যখন নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে আসছে, তখন আমাদেরও সচেতন থাকতে হবে—কারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক আর কারা ‘পেইড এজেন্ট’ হয়ে কাজ করছে।

নাহিদ ইসলামের মতো নতুন রাজনৈতিক নেতা যদি এই পথ ধরে এগিয়ে যান, তাহলে তাকে ক্ষমা করবে না দেশের ছাত্র-জনতা। তখন কোনো আদর্শ বা দল নয়, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের দায়ে বিচার হবেই।

মোটকথা, বাংলাদেশ একটি একক জাতিসত্তাভিত্তিক স্বাধীন রাষ্ট্র। এখানকার সব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অংশ, আমাদের রাষ্ট্রের মর্যাদার অংশ—কিন্তু তারা কেউই ‘আদিবাসী’ নামে ভিন্ন জাতি হিসেবে স্বীকৃত নয়, হতে পারে না। এই চক্রান্তকারীরা যতই দেশপ্রেমের মুখোশ পরুক, বাস্তবে তারা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের চালিকা শক্তি। এখনই রুখে না দাঁড়ালে কাল হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।