আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভ্রান্তিকর ‘আদিবাসী’ এজেন্ডা আসলে বিচ্ছিন্নতা উসকে দেয়ার প্রজেক্ট!

আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভ্রান্তিকর ‘আদিবাসী’ এজেন্ডা আসলে বিচ্ছিন্নতা উসকে দেয়ার প্রজেক্ট!

আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভ্রান্তিকর ‘আদিবাসী’ এজেন্ডা আসলে বিচ্ছিন্নতা উসকে দেয়ার প্রজেক্ট!
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের আওতায় আদিবাসীদের অধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রক্রিয়ার (EMRIP) চলমান ১৮তম অধিবেশনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আবারও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করেছেন স্বীকৃতির আদায়ের নামে উসকানির প্রজেক্ট বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের প্রতিনিধি মনিরা ত্রিপুরা। গত ১৫ জুলাই তার বক্তব্যে তিনি সরাসরি বাংলাদেশ সংবিধান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং দেশের অখণ্ডতা ও একক জাতিসত্ত্বাকে চ্যালেঞ্জ করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন।

মনিরা ত্রিপুরা তার বক্তব্যে বাংলাদেশে “আদিবাসী” হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দেওয়াকে ‘অধিকার হরণ’ বলে চিহ্নিত করেছেন, অথচ তিনি পুরোপুরি অবগত থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে উপেক্ষা করেছেন যে, বাংলাদেশ সংবিধান এই ভূখণ্ডে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসমূহকে ‘উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, এবং ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের রায় ও জাতীয় নীতিমালায় স্পষ্টভাবে নির্ধারিত রয়েছে।

আসলে এই বক্তব্য এককথায় একটি সুপরিকল্পিত আন্তর্জাতিক অপপ্রচার—যার পেছনে রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ও তাদের তথাকথিত ‘আদিবাসী আন্দোলন’-এর পুরোনো ভূত। তাদের উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার—জাতিগত বিভাজন তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদেশি চাপ সৃষ্টি করা।

মনিরা ত্রিপুরার বক্তব্যে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত আরও স্পষ্ট হয় যখন তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে (NHRC) জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ মেকানিজমে যুক্ত করার আহ্বান জানান। এই কমিশন এখনো পুনর্গঠিত হয়নি—এবং এই মুহূর্তে কমিশনকে ব্যবহার করে কোনো গোষ্ঠী যদি আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ডা চালাতে চায়, তবে সেটি ভবিষ্যতের জন্য একটি ভয়ংকর দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

আরেকটি আশঙ্কাজনক দিক হলো—বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিস (OHCHR) বাংলাদেশে খোলার জন্য নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। অনেকেই বলছেন—এটি একটি কূটনৈতিক আত্মঘাত। কারণ এই অফিস খোলা মানেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার নতুন একটি পোর্টাল চালু হয়ে যাওয়া।

এ ধরনের মানবাধিকার অফিস খোলা হলে—

  • আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো যেমন ইউপিডিএফ ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস আন্তর্জাতিক বৈধতা পাওয়ার সুযোগ পাবে।
  • তথাকথিত ‘আদিবাসী অধিকার’ প্রতিষ্ঠার নামে ‘আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার’, ‘ভূমি ও সম্পদের মালিকানা’ ইত্যাদি দাবির পেছনে জাতিগত সীমানা তৈরির পদক্ষেপ শুরু হতে পারে।
  • আন্তর্জাতিক এনজিও ও বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা সরাসরি দেশের আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও নীতি নির্ধারণে হস্তক্ষেপ করার লাইসেন্স পেয়ে যাবে।
  • দেশে গড়ে উঠতে পারে জেনেভা ভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী লবির প্রভাবিত তথাকথিত ‘হিউম্যান রাইটস ট্রাইব্যুনাল’ যা মূলত রাষ্ট্রদ্রোহের আড়ালে মানবাধিকার চর্চার মুখোশ।

মনিরা ত্রিপুরা তার বক্তব্যে দাবী করেছেন যে আদিবাসীরা “বাঙালি নয়”। অথচ বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—“আমরা সবাই বাঙালি জাতিসত্তার অংশ”। এই জাতীয় ঐক্যের ধারণাকে অস্বীকার করে আদিবাসী নামধারী কিছু গোষ্ঠী সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে, যা সরাসরি রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।

এক্ষেত্রে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ ও সাংবিধানিকভাবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। শুধু সুশীল সমাজের দাবি নয়, বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা দরকার—কমিশন যাতে কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চে রাষ্ট্রবিরোধী এজেন্ডার পুতুল হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।

সর্বোপরি, জাতিসংঘের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সংবিধান ও নিরাপত্তা নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে, তবে তা বন্ধ করতে হবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে—দ্রুত, দৃঢ় ও যথাযথভাবে।

এই রাষ্ট্র সবকটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণের অঙ্গীকারবদ্ধ—কিন্তু আদিবাসী নামে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দাবিদাওয়া বা বিদেশি চাপ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র কখনোই বরদাস্তযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাজানো অভিযোগ ও মিথ্যাচার আন্তর্জাতিক মঞ্চে যারা উপস্থাপন করছে, তাদের জবাব আন্তর্জাতিক ভাষায়, নীতিতে ও তথ্য দিয়ে দিতে হবে—অন্যথায় এই অপপ্রচার আগামীতে বড় সংকটে পরিণত হবে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।