সন্ত্রাসীর মৃত্যু নিয়ে মায়াকান্না: বম ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ কি সন্ত্রাসকে আড়াল করার চেষ্টা?

সন্ত্রাসীর মৃত্যু নিয়ে মায়াকান্না: বম ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ কি সন্ত্রাসকে আড়াল করার চেষ্টা?

সন্ত্রাসীর মৃত্যু নিয়ে মায়াকান্না: বম ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ কি সন্ত্রাসকে আড়াল করার চেষ্টা?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)-এর গ্রেপ্তারকৃত সক্রিয় সদস্য ভান লাল রোয়াল বম (৩৫)-এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বম স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন যে বিবৃতি দিয়েছে, তা ঘিরে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মূলত কেএনএফ-এর হয়ে সশস্ত্র অপরাধে জড়িত এবং দীর্ঘদিন যাবত জেলে থাকা একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যুতে যে ভাষায় “রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন”, “স্লো জেনোসাইড”, “আদিবাসী নিধন” প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর প্রতি সরাসরি অবমাননার শামিল বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) প্রকাশিত বিবৃতিতে বিএসএ দাবি করে, ভান লাল রোয়াল বম বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক ছিলেন এবং কারাগারে “অমানবিক অবহেলা ও চিকিৎসা বঞ্চনার” শিকার হয়ে মারা গেছেন। অথচ বাস্তবে তিনি ছিলেন কেএনএফ-এর একজন সক্রিয় সহযোগী। তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র দস্যুতা, অস্ত্রসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড এবং বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতিসহ একাধিক নাশকতার অভিযোগে মামলা চলমান ছিল। এমনকি তার গ্রেপ্তারের সময়ও সেনাবাহিনীকে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল এবং কেএনএফের হামলায় বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হন।

কেএন্ফ মূলত পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে তথাকথিত কুকিচিন স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র সন্ত্রাসে লিপ্ত। বিভিন্ন সময় তারা ব্যাংক লুট, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ, সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিত হামলা, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়সহ নানা অপরাধে জড়িত ছিল। চলতি বছরের শুরুতে রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি এলাকায় তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো গুঁড়িয়ে দিতে সেনাবাহিনী যে বড় মাপের অভিযান চালায়, তাতে কেএনএফের বহু সদস্য গ্রেপ্তার হয়। এছাড়া গতবছর একটি অভিযানে ভান লাল রোয়াল বম অন্যান্য সন্ত্রাসীদের সাথে গ্রেফতার হন।

সন্ত্রাসীর মৃত্যু নিয়ে মায়াকান্না: বম ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদ কি সন্ত্রাসকে আড়াল করার চেষ্টা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর প্রতি সংবেদনশীলতা থাকা উচিত—তবে কেএনএফের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে অতিরঞ্জিত মানবাধিকার সংক্রান্ত আক্রমণাত্মক বিবৃতি আসলে নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল ভাঙার একটি সংগঠিত প্রচেষ্টা। বিশেষত যখন কেএনএফ খোদ বান্দরবানের সাধারণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মানুষদের উপরও অস্ত্র তুলে ধরেছে, তখন এই ধরনের ‘অন্ধ মানবতাবাদ’ আসলে কেএনএফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরোক্ষ সমর্থন হিসেবেই দেখছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

প্রসঙ্গত, কেএনএফে বিরুদ্ধে সরকার ইতোমধ্যেই নানা ধরনের সন্ত্রাস বিরোধী কার্যক্রম শুরু করেছে। অথচ এমন এক সময়ে তাদের দোষী সদস্যদের ‘নিরপরাধ’ আখ্যা দিয়ে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ বা ‘জাতিগত নিধন’ কথাবার্তা ছড়ানো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর আত্মত্যাগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে দায়িত্ব পালনকালে কেএনএফের অতর্কিত হামলায় এ পর্যন্ত একাধিক সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। বিপরীতে পাহাড়ি জনপদে কেএনএফে ভয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বহু বছর ধরে স্থবির ছিল। সাম্প্রতিক সেনা অভিযান সেই অবস্থা থেকে মুক্তি এনে দিয়েছে। এখন ‘সন্ত্রাসীদের সহানুভূতি আদায়ের প্রচেষ্টা’ নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।