চোরাচালানবিরোধী অভিযানের জবাবে এবার সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে টার্গেট করছে শাহীন চক্র
 
                 
নিউজ ডেস্ক
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে চোরাচালানবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া আলোচিত শীর্ষ চোরাকারবারি শাহীন ওরফে শাহীন ডাকাত কারাগারে থাকলেও তার নির্দেশে চক্রটি আবারও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। শুধু তাই নয়, অভিযানে অংশ নেওয়া সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সদস্যদের বিরুদ্ধেই এখন পাল্টা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী রামুর গর্জনিয়া এলাকার মাঝিরকাটা থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৫ জুন শাহীনকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়। তার আস্তানা থেকে ৩১টি গরু ও একটি ছাগল জব্দ করা হয়। এই ঘটনার পর চক্রটি চোরাচালান পুনরায় শুরুর পাশাপাশি অভিযানে অংশ নেওয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক মামলা দায়েরের পথ বেছে নিয়েছে।
গত ১০ জুলাই শাহীন চক্রের অন্যতম সহযোগী নুরুল আবছার ওই জব্দ গবাদিপশুগুলোকে নিজের দাবি করে বিজিবির ছয় সদস্য ও অভিযানের এক স্থানীয় তথ্যদাতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। যদিও অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভিযানকালে ওই পশুগুলো উদ্ধার করা হয় শাহীনের গোপন আস্তানা থেকেই, যা আবছারের বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে।
মামলার আবেদনে যে দুইজনকে সাক্ষী হিসেবে দেখানো হয়েছে, তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের ভয় দেখিয়ে সাক্ষী বানানো হয়েছে। গরুগুলো আসলে শাহীনের আস্তানা থেকেই জব্দ করা হয়েছিল।”
নিরাপত্তা সূত্রগুলোর মতে, এই মামলাটি মূলত শাহীনকে জামিনে মুক্ত করতে এবং তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো দুর্বল করে দেওয়ার একটি কৌশল। একইসঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে তার পুরনো কিছু ছবি ও ‘মানবিক’ কার্যক্রমের খবর ছড়িয়ে দিয়ে নতুন করে ভাবমূর্তি গঠনের চেষ্টাও করছে চক্রটি।
জানা গেছে, কারাগারে বসেই শাহীন চোরাচালান চক্রকে চালাতে নির্দেশনা দিচ্ছেন। তার দুই প্রধান সহযোগী নিরুপম শর্মা ও নুরুল আবছারের নেতৃত্বে ২২ জনের একটি তালিকাভুক্ত চক্র পুনরায় সীমান্ত এলাকায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এই চক্রটি কিছু প্রভাবশালী রাজনীতিক ও প্রশাসনিক মহলের আশ্রয়ে নিরাপদে চোরাচালান পরিচালনা করে আসছে। এমনকি এক সাবেক সংসদ সদস্যের নামও এ বিষয়ে স্থানীয় মহলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমাদাদুল হক বলেন, “চোরাচালান বন্ধ হলে অসাধু চক্র ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর পাল্টা চাপ তৈরি করে। এতে অনেক সময় সৎ কর্মকর্তারা নিরুৎসাহিত হন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবির রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, “চোরাচালানবিরোধী কঠোর তৎপরতায় চক্রটি ক্ষুব্ধ হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। আমরা তাদের শনাক্ত করেছি এবং আইনের আওতায় আনতে কাজ চলছে।”
প্রসঙ্গত, নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে মাদক, অস্ত্র ও গবাদিপশু চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত কিছু শক্তিশালী সিন্ডিকেটকে ভাঙতে একাধিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে যৌথ বাহিনী। অভিযানে সাফল্য এলে অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
