জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে পাহাড়ে হতে পারে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট, বাড়ছে শঙ্কা

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে পাহাড়ে হতে পারে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট, বাড়ছে শঙ্কা

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে পাহাড়ে হতে পারে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট, বাড়ছে শঙ্কা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর ঐক্যপ্রচেষ্টা নতুন মাত্রা এনেছে খাগড়াছড়ির রাজনীতিতে। তবে শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই নয়, এই উদ্যোগকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যেও। কারণ, এ তিনটি দল— ইউপিডিএফ (প্রসীত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)— দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জড়িয়ে রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক ঐক্য শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র প্রভাব ও চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দীর্ঘ বিরোধ ও রক্তাক্ত সংঘাত পেছনে ফেলে এখন একটি আসনভিত্তিক জোট গঠনের চেষ্টায় আছে তিন আঞ্চলিক শক্তি। প্রাথমিক সমঝোতা অনুযায়ী খাগড়াছড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে ইউপিডিএফকে, রাঙামাটি ও বান্দরবান জনসংহতি সমিতিকে (সন্তু লারমা), আর ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও জনসংহতি সমিতিকে (এমএন লারমা) রাখা হবে উপজেলা নির্বাচনের ভাগে।

রাজনৈতিকভাবে এটি ‘সচেতন কৌশল’ হলেও, বাস্তবতায় এই জোট যদি সশস্ত্র অবস্থানকে ব্যবহার করে ভোটের মাঠে প্রভাব বিস্তার করতে চায়, তাহলে তা শুধু খাগড়াছড়ি নয়, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য এক নতুন ধরনের নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে— ভোটারদের স্বাধীন মতপ্রকাশে বিঘ্ন, প্রার্থীদের ওপর হুমকি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে ইউপিডিএফ-এর জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, “আমরা নির্বাচনমুখী দল। সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে অংশ নেব।” অন্যদিকে জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) জুপিটার চাকমা বলেন, “তফসিল ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে একক না দলবদ্ধভাবে নির্বাচন করব।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্যে নির্বাচনের আগেই চাপে ফেলা হচ্ছে প্রশাসন ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোকে। যদিও নির্বাচন কমিশন এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

খাগড়াছড়িতে জমে উঠেছে নির্বাচনী লড়াই

খাগড়াছড়ি আসনে ইতোমধ্যেই বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। মাত্র একটি সংসদীয় আসন হলেও ৯ উপজেলা, ৩ পৌরসভা ও ৩৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ এলাকা নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে পাহাড়ে হতে পারে আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট, বাড়ছে শঙ্কা

আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের ‘দুর্গ’ খ্যাত এই আসনে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বিএনপি। দলের সহ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ও জেলার সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রধান প্রার্থী হিসেবে আলোচনায়। বিকল্প হিসেবে আলোচনায় আছেন তার স্ত্রী জাকিয়া জিনাত বিথী, সমীরণ দেওয়ান ও শহীদুল ইসলাম ফরহাদ।

এদিকে জামায়াতে ইসলামি আগেই তাদের একক প্রার্থী হিসেবে এয়াকুব আলী চৌধুরীকে ঘোষণা করেছে, যিনি জেলার বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে সক্রিয় থেকে আলাদা পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। তার নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ইতোমধ্যেই মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, রামগড়সহ কয়েকটি উপজেলায় সাড়া ফেলেছে।

ইসলামী আন্দোলনও এখানকার মাঠে নামছে মাওলানা কাউছার আজিজীকে দিয়ে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আলোচনায় আছেন জেলা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মনজিলা ঝুমা।

পাহাড়ি ভোটাররাই হয়ে উঠবেন মূল নিয়ামক

খাগড়াছড়ি আসনের প্রায় ৫ লাখ ৪২ হাজার ভোটারের বড় একটি অংশ পাহাড়ি জনগোষ্ঠীভুক্ত। ফলে শেষ পর্যন্ত জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দেবে এ জনগোষ্ঠীর ভোটই— এমনটাই মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

তবে আঞ্চলিক দলগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থেকে পাহাড়ি ভোটব্যাংকে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়— তবে এটি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত— তিন প্রধান শক্তির জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশেষ করে যদি ঐ জোটের রাজনৈতিক রূপান্তরের আড়ালে সশস্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি বহাল থাকে, তাহলে পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে— যা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পথেও অন্তরায় হবে।

নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে খাগড়াছড়ি আসনে শুধু ভোটের উত্তাপ নয়, নিরাপত্তার ঝুঁকিও বাড়ছে। আঞ্চলিক সশস্ত্র দলগুলোর জোট গঠনের এই রাজনৈতিক কৌশল আগামী দিনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এই সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী প্রস্তুতি নেয়।

তথ্যসূত্র: আমার দেশ।

You may have missed