জেলা পরিষদের নিয়োগে উপজাতিদের অগ্রাধিকার কেন সংবিধানবিরোধী হবে না, হাইকোর্টের রুল জারি

জেলা পরিষদের নিয়োগে উপজাতিদের অগ্রাধিকার কেন সংবিধানবিরোধী হবে না, হাইকোর্টের রুল জারি

জেলা পরিষদের নিয়োগে উপজাতিদের অগ্রাধিকার কেন সংবিধানবিরোধী হবে না, হাইকোর্টের রুল জারি
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয় উপজাতি বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার প্রদানের বিধানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের আওতায় দায়ের করা এ রিট আবেদনে বলা হয়েছে, চাকরিতে একচেটিয়া উপজাতিদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিধান সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিকদের সমঅধিকার ও বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

গত ৩১ জুলাই বৃহস্পতিবার রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ সরকারকে রুল জারি করেছেন।

রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন, ১৯৮৯-এর ধারা ৩২(২) এবং ওই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালার ৪(২) কেন সংবিধানবিরোধী ঘোষণা করা হবে না। একই সঙ্গে গত ১২ জুন ২০২৫ তারিখে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, যাতে উপজাতি বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, কেন আইনগত কর্তৃত্ববিহীন ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চেয়েছেন আদালত।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগে অগ্রাধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলো অস্পষ্ট এবং প্রোপোর্শনালিটি বা সামঞ্জস্য নির্ধারণে কোনো নির্দেশনা দেয় না। এর ফলে সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার— বিশেষত সংবিধানের ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত সমঅধিকার, বৈষম্যহীনতা, সমান সুযোগ ও ন্যায়সঙ্গত আইনের নিশ্চয়তা— লঙ্ঘিত হচ্ছে।

রিট আবেদনটি করেন খাগড়াছড়ি সদরের বাসিন্দা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম সম-অধিকার আন্দোলনের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদ উল্লাহ। তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এম.জি. মাহমুদ (শাহীন)।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের নিয়োগে উপজাতিদের অগ্রাধিকার প্রশ্নে রিট, হাইকোর্টের রুল জারি
শর্তাবলীর ৭ নং কলামে জেলা পরিষদ আইনের দোহাই দিয়ে শুধুমাত্র উপজাতীয় প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান (মিলন), ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খান জিয়াউর রহমান এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আল-ফাইশাল সিদ্দিকী, মো. ইমদাদুল হানিফ প্রমুখ।

রুলে, আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শাতে নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ড প্রশাসক।

রুল জারি সংক্রান্ত আদেশে হাইকোর্ট বলেছেন, কেন স্থানীয় উপজাতি বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার এই বিধান সংবিধানবিরোধী হবে না এবং কেন সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।

এই রিট আবেদন পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উপজাতিদের অগ্রাধিকার বনাম বাঙালিদের নিয়োগ বৈষম্য বিতর্ককে নতুনভাবে সামনে এনেছে।

স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী মনে করে, প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে একচেটিয়া উপজাতিদের অগ্রাধিকার, চাকরির প্রতিযোগিতায় বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এসব অগ্রাধিকার নীতির কারণে তারা সংবিধানে প্রদত্ত সমঅধিকারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রিটকারী মো. আসাদ উল্লাহ জানান, যুগের পর যুগ পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে একচেটিয়া উপজাতি নিয়োগের ফলে এখানকার চাকরির বাজারে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। তথাকথিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে গিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে বৈষম্যের জাতাকলে পৃষ্ট করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গতবছর জুলাই বিপ্লব পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে উপজাতিদের জন্য সরকারি চাকরিতে ১ শতাংশ কোটা রাখা হলেও পাহাড়ের প্রত্যেকটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘শুধুমাত্র উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার’ দেয়ার ফলে চাকরি বঞ্চিত হচ্ছেন এ অঞ্চলের বাঙালিরা। যা, রাষ্ট্রের সংবিধানের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

উল্লেখ্য, এই রিটের ফলাফল শুধু খাগড়াছড়ি নয়, পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকরি কাঠামোতে বৈষম্যরোধে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। আদালতের চূড়ান্ত রায় পাহাড়ের নিয়োগ নীতি ও রাষ্ট্রীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ— দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য নির্ধারণে দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।