বান্দরবানে ৫ মারমা যুবক কর্তৃক পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ, সালিশে চাপা পড়ল ধর্ষিতার আর্তনাদ
![]()
নিউজ ডেস্ক
বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির এক নিরীহ মারমা শিক্ষার্থী তার স্বজাতির ৫ যুবক কর্তৃক ভয়ঙ্কর গণধর্ষণের শিকার হলেও তাকে ন্যায়বিচার না দিয়ে সামাজিক বিচারের নামে প্রহসন করা হয়েছে। অভিযুক্ত পাঁচ যুবককে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায়। ধর্ষণকারীরা হলেন- রুমা উপজেলার পাইন্দু হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা ক্যাহ্লা ওয়াইং মারমা, ক্যওয়ং সাই মারমা, চহাই মারমা, উহাই সিং মারমা এবং ক্য সাই ওয়ং মারমা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার জানিয়েছে, চলতি মাসের শুরুতে পাইন্দু ইউনিয়নের হেডম্যান পাড়ার বাসিন্দা রাংমেশে মারমা’র ছেলে শৈহাইনু মার্মা প্রথমে ছাত্রীটিকে একা পেয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরে তার সহপাঠী ও বন্ধুদের মাধ্যমে ঘটনাটি জানাজানি হলে শৈহাইনু’র চার বন্ধু বন্ধু ক্যাহ্লা ওয়াইং, ক্য ওয়ং সাই, চহাই, উহাই সিং ও ক্য সাই ওয়ং ভয়ভীতি দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে একই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। নির্যাতন সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত অসহায় কিশোরী ঘটনাটি পরিবারকে জানায়।
কিন্তু ন্যায়বিচার দেওয়ার বদলে গত ১৯ আগস্ট পাইন্দু হেডম্যান পাড়ায় কারবারী থোয়াইসা মার্মার সভাপতিত্বে এক সালিশ বসে। সেখানে পাইন্দু ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গংবাসে মার্মা এবং পাইন্দু মৌজার হেডম্যান মংচউ মার্মাগং-এর নেতৃত্বে অভিযুক্তদের মোটে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি জরিমানার টাকাটিও বাকি রাখা হয়, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা গংবাসে জানায়, অভিযুক্ত ধর্ষণকারীদের ৫ জনকে মোট ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি আরও জানান, কয়েকদিনের মধ্যে টাকা আদায় করে ভুক্তভোগী ছাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হবে।
তার দাবি, ভুক্তভোগীর অভিভাবক ও পাড়াবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে তারা এ সামাজিক সালিশি বিচারে মিলিত হয়েছিলেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, টাকা দিয়ে ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধকে ধামাচাপা দেওয়া কেবল অন্যায় নয়, এটি ভবিষ্যতে আরও অপরাধের পথ খুলে দেবে। তারা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছে—অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, ভিকটিমের পরিবারকে পাড়ায় আটকে রাখা হয়েছে যাতে তারা আইনি পদক্ষেপ নিতে না পারেন।
রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহরাওয়ার্দী জানিয়েছেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন এবং পুলিশ তা যাচাই করছে। রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেছেন, ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে অবিলম্বে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এ ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতা এবং প্রভাবশালীদের প্রহসনের বিচার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ন্যায়বিচারবঞ্চিত এক শিশুকে এভাবে উপহাস করা শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজের জন্যই চরম অপমানজনক বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
উল্লেখ্য, ধর্ষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ কখনো সামাজিক সালিশে নিষ্পত্তি হতে পারে না। এখন জনমতের একটাই দাবি—ভুক্তভোগী শিশুর পাশে দাঁড়িয়ে ধর্ষকদের কঠোর আইনি শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সচেতন মহলের প্রশ্ন, রুমার এই নৃশংস গণধর্ষণের পরও পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তাদের এই নীরবতা জনমনে তীব্র প্রশ্ন তুলছে—শিশু শিক্ষার্থীর আর্তনাদ কি তাদের কানে পৌঁছায় না? তবে কি তাদের মানবাধিকারের চেতনা জেগে ওঠে শুধু বাঙ্গালিদের বেলায়? স্বজাতি অপরাধী হলেই কি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধও তাদের কাছে নীরব থাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়? এই দ্বিমুখী অবস্থান আসলে কাদের স্বার্থ রক্ষা করছে—অপরাধীর, না ভুক্তভোগীর?
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।