খাগড়াছড়িতে পিসিসিপি’র দুই গ্রুপের আলাদা কর্মসূচি: অবাঞ্চিত আর হুঁশিয়ারিতে বিভক্তির আভাস
![]()
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্যাতিত বাঙালিদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি)। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভক্তি এখন খোলাখুলিভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। এরই জ্বলন্ত প্রমাণ পাওয়া গেল খাগড়াছড়িতে, যেখানে একই দিনে নাগরিক পরিষদের ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ- পিসিসিপির জেলা কমিটির দুটি ভিন্ন গ্রুপ আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করেছে।
আজ ২৯ আগস্ট ২০২৫ (শুক্রবার) খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির ব্যানারে এক জরুরি সভায় সভাপতি মুজাহিদ ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গ্রুপিং সৃষ্টির অভিযোগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। সংগঠনের একাংশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের কার্যক্রম ব্যক্তিগত হিসেবে গণ্য হবে এবং সংগঠনের কোনো দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে না।
একইসঙ্গে, জেলা কমিটির পক্ষ থেকে মো. সোহেল রানা ও মো. মনির হোসেনকে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটির নেতারা আশা প্রকাশ করেন যে, নতুন নেতৃত্বের অধীনে সংগঠন ঐক্য ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে।
অন্যদিকে, একই দিন শহরের একটি রেস্তোরায় জেলা শাখার উদ্যোগে প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহাদাৎ হোসেন কায়েশ। জেলা সভাপতি মুজাহিদ ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে বিভিন্ন উপজেলা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটির নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে নেতারা গ্রুপিং প্রসঙ্গে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় সভাপতিও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দেন এবং বিভাজন সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
অনুসন্ধান বলছে, দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের অভ্যন্তরে দলীয় পদ-পদবীকে ঘিরে অদৃশ্য কোন্দল চলে আসলে সম্প্রতি ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের বিভক্তি তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসে। চলতি মাসের ১৬ আগষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় মহাসচিব আলমগীর কবিরের উপস্থিতিতে খাগড়াছড়িতে বৃক্ষরোপন কর্মসূচী পালন করে ছাত্র পরিষদের একাংশ। সেখান থেকেই মূলত সংগঠনটির বিভক্তি প্রকোশ পায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিসিসিপির বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী স্বীকার করেছেন, নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা নিজেদের পদবী ধরে রাখার স্বার্থে ছাত্র সংগঠনটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন গ্রুপ-উপ গ্রুপ সৃষ্টি করছেন।
মো. সোহেল রানা ও মো. মনির হোসেনকে নিয়ে গঠিত আজকের জেলা কমিটির চলতি মাসের ১৬ তারিখ বৃক্ষরোপন অভিযান অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব আলমগীর কবির, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুম রানা, জেলা সহ-সভাপতি মো. মহিউদ্দিন মাহি, ছাত্র পরিষদের সাবেক জেলা সভাপতি মো. সুমন আহমেদকে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ১৬ আগষ্ট সন্ধ্যায় পিসিসিপির জেলা কমিটির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানের উপস্থিতিতে জেলা সদরের একটি অস্থায়ী কার্যালয়ে সভা করে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের নাম ভাঙিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ তোলা হয়। পিসিসিপির নাম বিক্রি করে অনেকে প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে দাবি করে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এছাড়া এসব সংগঠনবিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। ওই অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সম্পাদক আবদুল মজিদকে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
সচতেন মহল বলছেন, খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির এই দ্বৈত কর্মসূচি স্পষ্ট করে, সংগঠনের ভেতরে অদৃশ্য বিভক্তি দীর্ঘদিন ধরে চললেও এখন তা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
এই বিভক্তির ফলে,
- নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যা সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছে। মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।
- বাঙালি জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার ও অধিকার আদায়ের সংগ্রাম পিছিয়ে যাচ্ছে।
- আন্দোলনের মূল এজেন্ডা থেকে মনোযোগ সরে গিয়ে ক্ষমতার লড়াইয়ে শক্তি নষ্ট হচ্ছে।
- বাইরের শক্তি ও বিরোধী পক্ষ এই বিভক্তিকে কাজে লাগিয়ে আন্দোলনকে দুর্বল করার সুযোগ পাবে।
এসব বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ হাবীব আজমের সাথে। হাবিব জানান, সংগঠনের ব্যানারকে জড়িয়ে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ড পরিচালনা, নৈতিক স্খলনজনিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া ও চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি সোহেল রানাকে তার পদ-পদবী থেকে অব্যাহাতি দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। এরপরও নাগরিক পরিষদের এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার ইন্ধনে সোহেল রানা কর্তৃক সংগনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিভিন্ন একক ও বিতর্কিত কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে, যা সংগঠনের নীতি পরিপন্থি। এ সব বিষয়ে তাকে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত ভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, যে সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রামের নির্যাতিত বাঙালিদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই সংগঠনই এখন নিজেদের ভেতরে গ্রুপিং ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে আন্দোলন শুধু পিছিয়েই যাবে না, সাধারণ মানুষের আস্থাও কমে যাবে। একারণে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত দ্রুত সমঝোতায় পৌঁছে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা। অন্যথায়, আন্দোলন টিকে থাকলেও কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়বে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।