নির্যাতনের কারণেই মৃত্যু হয় গৃহবধূ প্রীতি রানী ত্রিপুরার! দুই আসামীর স্বীকারোক্তির পর তিন বাঙ্গালী যুবক জামিনে মুক্ত

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
মারধর ও নির্যাতনের কারণেই গৃহবধু প্রীতি রানী ত্রিপুরার মৃত্যু হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দিয়েছে দুই আসামী ধন লাল ত্রিপুরা এবং কল্প ত্রিপুরা। জবানবন্ধী প্রদানকালে তারা বলে বাঙ্গালী এক ছেলের সাথে প্রীতি রানী ত্রিপুরার ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার কারণে ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা তাকে মারধর ও নির্যাতন করে। যার ফলে ঘটনাস্থলে প্রীতি রানী ত্রিপুরা অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং এক পর্যায়ে মারা যায়। পরে তার লাশ একটি সিএনজিতে করে নিয়ে দিঘীনালা সড়কের রাবার বাগান এলাকায় ফেলে আসা হয়।
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার রামসিং দেওয়ান পাড়া এলাকার পতেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ছেলে ধন লাল ত্রিপুরা (২০) এবং দিঘীনালা উপজেলার বাশিরাম পাড়া এলাকার ওমকেশর ত্রিপুরার ছেলে কল্প ত্রিপুরা (১৯) কে আদালতে তোলা হলে তারা উভয়ে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী প্রদান করে। জবানবন্ধী রেকর্ড করেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ গোলাম আফছার বলেন জবানবন্ধী প্রদানকালে উভয় আসামী বলেন ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রাতে তারা প্রীতি রানী ত্রিপুরাকে ধরে খাগড়াছড়ি শহরের খাগড়াপুর এলাকার একটি ক্লাবে নিয়ে যায় এবং সেখানে জেএসএস (এমএন লারমা) গ্রুপের অনেক নেতা/কর্মী উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে একজন লাথি দিয়ে প্রীতি রানী ত্রিপুরাকে ক্লাবে ডুকায়। পরে তারাসহ জেএসএস নেতারা তাকে (প্রীতি রানী ত্রিপুরা) চড়, থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারে এবং কেন বাঙ্গালী ছেলেকে ভালোবেসেছে সেই সম্পর্কে জানতে চায়। প্রীতি রানী ত্রিপুরা চিৎকারের চেষ্ঠা করলে এক পর্যায়ে তার মুখে কস্টটেপ লাগানো হয় এবং আরেকজন প্রীতি রানী ত্রিপুরার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলে সেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে কয়েকজনে মিলে তাকে সিএনজিতে তুলে দিঘীনালা সড়কের রাবার বাগান এলাকায় ফেলে যায়। পুলিশ ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তার মৃত দেহ উদ্ধার করে। তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের স্বার্থে নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করেননি।
এর আগে, বিগত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ইং তারিখে গৃহবধু প্রীতি রানী ত্রিপুরাকে হত্যার অভিযোগে জেলার পানছড়ি উপজেলার কলোনীপাড়া এলাকার বাহার মিয়ার ছেলে আসাদুল ইসলাম রাসেল, সাওতালপাড়া এলাকার তারা মিয়ার ছেলে আল আমিন এবং দমদম এলাকার মৃত আবদুল বারেকের ছেলে কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করেন।
বিগত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ইং তারিখে গ্রেফতারকৃতদের তিন সন্দেহভাজনকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোরশেদুল আলমের কোর্টে তোলা হয় এবং ৭দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে ১নং সন্দেভাজন আসামীকে ২দিন এবং ২ ও ৩নং সন্দেহভাজনকে ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে ১নং আসামী আসাদুল ইসলামকে পূনরায় ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ গোলাম আফছার জানান ভিকটিম প্রীতি রানী ত্রিপুরা বিবাহিত ছিল। সে খাগড়াছড়ি সদরের চম্পাঘাট এলাকার হরিশংকর ত্রিপুরার স্ত্রী ছিল এবং বিবাহিত জীবনে তাদের পরিবারে রাতুল মনি ত্রিপুরা নামে ৬ বছরের একটি পুত্র সন্তানও ছিল। ভিকটিমের মোবাইল কল ডিটেলস পরীক্ষা করে বুঝা যায় সন্দেহভাজন আসামী আসাদুল ইসলামের সাথে ভিকটিমের গত জানুয়ারী, ২০১৯ থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এরই সুত্র ধরে ভিকটিম ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ চট্টগ্রামে যায় এবং ৩দিন অবস্থান করে । অবস্থানকালীন সময়ে ভিকটিম আসাদুলের সাথে একাধিকবার কথা বলে। এই সুত্র ধরেই আসাদুল এবং তার দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে ৬ জানুয়ারী (সোমবার) ধন লাল ত্রিপুরা এবং কল্প ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করলে আসল সত্য বেরিয়ে আসে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা আরো জানান ধন লাল ত্রিপুরা ও কল্প ত্রিপুরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দেবার পর আজ ৭ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) আসাদুল ইসলাম ও আল আমিনকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসান। এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে জামিন পেয়েছিল আরেক আসামী মোঃ কামাল।
উল্লেখ্য, এই হত্যাকান্ডটি আলোচিত হত্যাকান্ড ছিল এবং এনিয়ে বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ-সমাবেশ করার পাশাপাশি বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং দোষীদের গ্রেফতার দাবী করা হয়েছিল।