হয়রানির অভিযোগের আড়ালে নিরাপত্তা: পানছড়ির অংথুই মারমার অব্যক্ত ব্যথার গল্প

হয়রানির অভিযোগের আড়ালে নিরাপত্তা: পানছড়ির অংথুই মারমার অব্যক্ত ব্যথার গল্প

হয়রানির অভিযোগের আড়ালে নিরাপত্তা: পানছড়ির অংথুই মারমার অব্যক্ত ব্যথার গল্প
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

“আমরা আসলে খুব অসহায় রে ভাই। বাইরের দুনিয়ায় যা প্রচার হয়, সেইটা আসল কথা না। ফেসবুক, ইউটিউব বা শহরে বসা কিংবা বিদেশ অবস্থান করা তথাকথিত চাঁদাবাজ উপজাতি নেতারা বলে, সেনাবাহিনী নাকি আমাদের মারধর করে, হয়রানি করে। কিন্তু আমরা যারা গরিব-গেরস্ত, চাষাবাদ করি, জুমে যাই, চাষাভুষা – আমরা জানি আসল সত্যিটা অন্য রকম।’’

সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয়রানি-নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার পানছড়ি উপজেলার পূঁজগাং ইউনিয়নের এক নিরীহ উপজাতি অংথুই মারমা সাউথইস্ট এশিয়া জার্নালের সাথে এভাবেই তার অব্যক্ত ব্যথার গল্প শোনান।

‘রাত হলে পাহাড়ে অন্ধকার নামে, গুলির শব্দ হয়। দল-গোষ্ঠীর লোকেরা এসে খাবার চায়, টাকা চায়, না দিলে ভয় দেখায়। তখন আমাদের কারো পাশে দাঁড়ায় না। সেই সময় দূরে সেনা টহলের শব্দ/খবর শোনা গেলে ভেতরটা একটু জোর পায়। নিজের অজান্তেই মন বলে উঠে, সেনারা আসছে, ভয় নাই। আসলে এইটুকুই আমাদের শান্তির ভরসা।”- বলছিলেন অংথুই।

অংথুই মারমা বলেন, “কিন্তু আমরা খোলাখুলি কিছু বলতেও পারি না। দলের লোকেরা যদি দেখে আমরা সেনাবাহিনীর প্রশংসা করি, সাথে সাথে ডাক আসে, শাস্তির এলান হয়। জোর করে মাঠে নিয়ে যায়, র‍্যালি করায়, ব্যানার ধরায়। এমনকি ফেসবুকে মিথ্যা কথা ছড়াতে বাধ্য করে। নিজেদের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে বলতে হয় – ‘সেনারা গরিব পাহাড়ি মারতেছে, হয়রানি করছে’। অথচ ভিতরে ভিতরে জানি, এই সব কথা মিথ্যা। কিন্তু কে শুনবে আমাদের আসল কথা?”

তিনি আরও বলেন, “আগেও দেখছি, সেনা টহল বন্ধ থাকলেই গ্রামের কারো কারো ঘরে ডাকাতি হইছে, মানুষ খুন হইছে। আমার চাচাতো ভাইকেও একবার ধরে নিয়ে গেছিলো, সেনারা তখন অভিযান চালাইছে বলেই আমরা ওকে ফেরত পাইছি। কিন্তু বাইরে প্রচার হইছে, সেনারা নাকি নিরীহ মানুষ ধরছে। এইসব শুনে ভিতরটা কেমন জ্বলে ওঠে, কিন্তু মুখ খুলতে পারি না।”

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

অংথুই বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষ শান্তি চাই, চাষাবাদ করতে চাই, ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাইতে চাই। কিন্তু এই দল-গোষ্ঠীর লোকেরা আমাদের অধিকারের কথা বলে শান্তিতে থাকতে দেয় না। তারা চায় সবসময় অশান্তি থাকুক, যাতে বাইরের দুনিয়া ভাবে আমরা নির্যাতিত। আসলে আমরা নির্যাতিত হই – কিন্তু সেনার হাতে না, তাদের হাতেই।”

শেষে তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, “আপনারা দয়া করে আমাদের ভুল বুঝবেন না। আমরা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে না। আমরা জানি, তারা আমাদের পাহারা দেয়। কিন্তু দলের ভয়ে আমরা চুপ থাকি, মিছিলে যাই, স্লোগান দিই। মনে মনে প্রার্থনা করি – যেন কোন না কোন ভাবে আসল সত্য প্রকাশ পায়, আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন শান্তির পাহাড়ে বড় হয়।”

প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানকে ঘিরে বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ বাস্তবে পাহাড়ের গ্রামীণ মানুষই সেনাবাহিনীর টহল ও তৎপরতা থেকে নিরাপত্তা অনুভব করে। স্থানীয় জনগণের মুখে এই বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন পাওয়া গেলেও সংগঠনের ভয়ে প্রকাশ্যে বলতে সাহস পান না অনেকেই।

উল্লেখ্য, পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নেরও দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। অথচ স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী তা আড়াল করে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের মাধ্যমে অশান্ত পরিবেশ তৈরি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি পাহাড়ের সাধারণ মানুষের জন্য এক ধরনের নীরব বেদনাই বয়ে আনে।

-সাউথইস্ট এশিয়া জার্নালের পক্ষ হলে অংথুই মারমার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন মোঃ সাইফুল ইসলাম।