থমথমে খাগড়াছড়ির গুইমারা, ১৪৪ ধারা বহাল
![]()
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়িতে গতকাল সোমবার তৃতীয় দিনের মতো টানা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি চলে। জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কে যানবাহন চলাচল করছে না। তবে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে খাগড়াছড়ির সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম—এই দুই সড়কে জুম্ম ছাত্র-জনতা অবরোধ শিথিল ঘোষণা করায় দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে গেছে। আটকে পড়া পর্যটক এবং জরুরি কাজে অনেকে ছোটে নিজেদের গন্তব্যে।
অন্যান্য সড়কে অবরোধ চলবে বলে সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এদিকে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর দুই দিন অচলাবস্থা থাকলেও গতকাল বেলা বাড়ার সঙ্গে শহর ও শহরতলিতে কিছু কিছু ইজি বাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে শুরু করে। খাগড়াছড়ির বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সড়কের কয়েকটি স্থানে চোরাগোপ্তা ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ পালন করে পিকেটাররা।
তবে প্রকাশ্যে পিকেটিং দেখা যায়নি। এদিকে প্রশাসনের জারি করা ১৪৪ ধারা এখনো বহাল রয়েছে। রাঙামাটির লংগদু, বাঘাইছড়ি ও খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলা সড়কে অবরোধ থাকায় বিভিন্ন বাজারের জন্য নিয়ে আসা কাঁচামাল নিয়ে কিছু ট্রাক ও পিকআপ আটকা পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবহন শ্রমিকরাও।
ক্ষতির আশঙ্কায় প্রশাসনের সহযোগিতা চান তাঁরা।
এদিকে গত রবিবার জেলার গুইমারায় সহিংসতা চলাকালে গুলিতে তিনজন পাহাড়ি নিহত এবং কর্মকর্তাসহ সেনা সদস্য ও বেশ কয়েকজন পাহাড়ি-বাঙালি আহত হওয়ার পর এখনো গুইমারায় থমথমে অবস্থা। গতকাল সকালেও গুইমারায় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া বিভিন্ন স্থাপনায় ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ধোঁয়া নেভাতে কাজ করেন। সেখানে রবিবারের ঘটনায় রামসু বাজারসহ আশপাশ এলাকায় ৩০টির বেশি দোকানপাট, বসতবাড়ি, গুদাম ও সরকারি দপ্তরে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
শিবু ঘোষ নামের একজনের তিনতলা ভবনটিতে ছিল সরকারি ও এনজিওর অন্তত ৯টি কার্যালয়। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন আখতার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী জানান, গুইমারায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন- শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর কাজ চলছে। এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে থাকা তিনটি মরদেহের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁদের মরদেহ গত রবিবার বিকেলে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁদের প্রত্যেকের বাড়ি জেলার গুইমারায়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের আথ্রাউ মারমা (২৪), লিচুবাগান এলাকার আথুইপ্রু মারমা (২৬) এবং বটতলাপাড়ার থোয়াইচিং মারমা (২৪)।
সিভিল সার্জন মো. ছাবের জানান, নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্ত শেষে আইনি প্রক্রিয়ায় মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খাগড়াছড়ি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, গত দুই দিনে নানাভাবে আহত ৩০ জনের মতো জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তবে কোন ঘটনায় এবং কোথায় তারা আহত হয়েছে তা তিনি জানেন না। পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল জানান, পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতির দিকে। নতুন করে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সময়মতো ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়িতে এক স্কুলছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে জুম্ম ছাত্র-জনতা অবরোধের ডাক দেয়।
বিজিবির প্রেস ব্রিফিং
বিজিবির খাগড়াছড়ি সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম বলেছেন, খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উত্তরণে বিজিবি বেসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করছে। পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সে জন্য ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন আছে। দ্রুত পদক্ষেপের কারণে কেউ বড় ধরনের নাশকতার সুযোগ পায়নি। সেনাবাহিনী, অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও প্রশাসনের চেষ্টায় পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গতকাল বিকেলে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকায় প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন। পাহাড়ি-বাঙালি শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে বিজিবির তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এ সময় খাগড়াছড়ি ব্যাটালিয়নের (৩২ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরান কবির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান ও ইউছুপ আলী উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. আব্দুল মোত্তাকিম বলেন, বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে খাগড়াছড়ি ও আশপাশ এলাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, সীমান্তে কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে, যাতে ও পাশ থেকে অবৈধ অস্ত্র ঢুকতে না পারে। পাহাড়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
এদিকে জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকে তিন পার্বত্য জেলায় অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাঙামাটি শহরের অভ্যন্তরীণ যান চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে। অবরোধের সমর্থনে শহরের কোথাও পিকেটিং দেখা যায়নি। এদিকে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আন্দোলনকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার ছয় প্রতিনিধির। গতকাল সোমবার দিনের কোনো এক সময় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সংগঠনটির প্রতিনিধিরা ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়াসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেন। জানা গেছে, এতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে বৈঠকে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সরকারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কেউই কথা বলেননি। অবশ্য রাঙামাটি সফররত পার্বত্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন আভাস দিয়েছেন।
অন্যদিকে গত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জুম্ম ছাত্র-জনতার একটি প্রেস বিবৃতি দেখা গেছে। বিবৃতিতে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি। আটটি দাবির মধ্যে রয়েছে সব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, হতাহত ব্যক্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ, আটক ব্যক্তিদের মুক্তি, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার প্রভৃতি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।