খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতা: বাম জোটের একপাক্ষিক পরিদর্শন নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতা: বাম জোটের একপাক্ষিক পরিদর্শন নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ

খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সহিংসতা: বাম জোটের একপাক্ষিক পরিদর্শন নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের ইন্ধনে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর ঢাকায় থেকে আগত বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বাঙালি ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, প্রতিনিধি দলটি একপাক্ষিকভাবে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বক্তব্য শুনেই এলাকা ত্যাগ করার চেষ্টা করেন, অথচ আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফি রতনের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি ঢাকা থেকে খাগড়াছড়িতে পৌঁছান। দিনের শুরুতে তারা দক্ষিণ খবংপুরিয়া ইয়ং স্টার ক্লাব, অংম্রাচিং মারমার বাড়ি, স্বনির্ভর বাজার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সিভিল সার্জন, লিগ্যাল এইড অফিস ও পুলিশ সুপার কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

তবে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালিদের অভিযোগ, দলটি শুধুমাত্র কথিত ‘ভিকটিম’ ও পাহাড়ি পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, অথচ যেসব বাঙালি পরিবার সাম্প্রতিক সহিংসতায় তাদের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি হারিয়েছে, তাদের সঙ্গে দেখা করতেও রাজি হননি।

দুপুরে প্রতিনিধি দলটি যখন গুইমারা ও আশপাশের এলাকায় যাচ্ছিলেন, তখন বাঙালিরা তাদের পথ আটকে প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, “আমাদের দোকানপাট পুড়েছে, আমাদের ক্ষতি হয়েছে, আপনারা সেটা দেখতে আসেন।” কিন্তু শুরুতে প্রতিনিধি দল কোনো আগ্রহ দেখাননি। পরে স্থানীয়দের চাপে তারা বাধ্য হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু দোকান ও প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন এবং কয়েকজন বাঙালির সঙ্গে সংক্ষিপ্তভাবে কথা বলেন।

বাঙালি ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, বাম জোটের নেতারা যাদের সাথে কথা বলেছেন, তাদের অনেকেই স্থানীয় নয় এবং কেউ কেউ প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তও নন। একজন বাঙালি ব্যবসায়ী বলেন, “ওরা যাদের সামনে এনে কাঁদাচ্ছে, তারা কেউ গুইমারার মানুষ না। মনে হয়েছে, আগে থেকেই সাজানো ছিল।”

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, প্রতিনিধি দলটি রামসু বাজার থেকে প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার ভেতরে পাহাড়ি এলাকায় কিছু অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন। ওই বৈঠকে কোনো বাঙালি উপস্থিত ছিলেন না এবং সেখানে কোনো সংঘর্ষ বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনাও ঘটেনি বলে জানা গেছে।

এই একপাক্ষিক আচরণে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—“বাম জোট কি সত্যি সত্যি তদন্তে এসেছে, না কি পূর্বনির্ধারিত মতলবে?”

তবে প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য শুনে প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রতিনিধি দলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ কাফি রতন ছাড়াও ছিলেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিশু, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা শফিউদ্দিন কবীর আবিদ, কমিউনিস্ট লীগের নেতা নজরুল ইসলাম এবং সমাজতান্ত্রিক পার্টির নেতা আব্দুল আলী।

স্থানীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাম জোটের এই একতরফা পরিদর্শন শুধু বিভ্রান্তি বাড়াবে, শান্তিপ্রক্রিয়ায় আস্থা জোগাবে না। তাদের মতে, “যখন তদন্ত হয়, তখন সব পক্ষের কথা শোনা জরুরি। কিন্তু এই দলটি একপাক্ষিকভাবে শুধু পাহাড়িদের বক্তব্য নিয়ে চলে যাওয়ায় ঘটনাটির প্রকৃত চিত্র বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।”

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

You may have missed