সহিংস পাহাড়ে সেনাবাহিনীর শান্তির ছোঁয়া—এক মাসের শিশুর মুখে ফের জীবনের হাসি
![]()
নিউজ ডেস্ক
দূর পাহাড়ের পাথুরে ঢালে, যেখানে পৌঁছানোই কঠিন, সেখানে রয়েছে ঙুইখয় পাড়ার এক নিঃস্ব পরিবার—২৩ বছর বয়সী নামনিয়ান ম্রো ও তার দুই কন্যা সন্তান। বড় মেয়ের বয়স মাত্র ২ বছর, আর ছোটটি—পাওছং ম্রো—শুধু ১ মাস ৯ দিনের এক মাতৃহারা শিশু।
মায়ের মৃত্যুতে নিস্পাপ শিশুটির মুখে দুধ তোলারও উপায় ছিল না। পাহাড়ি দুর্গমতার কারণে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তাও পৌঁছানো যাচ্ছিল না। এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি কেউ—না কোনো তথাকথিত অধিকার আদায়ের সংগঠন, না কোনো রাজনৈতিক গ্রুপ। অথচ এই নির্জন পাড়ায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সেনাবাহিনীর ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও বান্দরবান রিজিয়নের উদ্যোগে এবং ৩১ বীরের ক্যাপ্টেন আসলাম এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির বলিপাড়া ব্যাটালিয়ন (৩৮ বিজিবি) সমন্বয়ে একটি মানবিক সহায়তা টিম ঙুইখয় পাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। দুর্গম পাহাড়ি পথে পায়ে হেঁটে তারা পৌঁছে যান নামনিয়ান ম্রো’র ঘরে—যেখানে এক মাসের শিশুটির চোখে একটুখানি দুধের আশাই ছিল জীবনের প্রতীক।
সেনাবাহিনীর এই মানবিক টিম শিশুটির পরিবারকে জীবিকা ও পুষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়, যার মধ্যে ছিল—
- ল্যাকটোজিন দুধ ৩টি
- চাউল ২৫ কেজি
- আটা ১০ কেজি
- ভোজ্য তেল ১৫ লিটার
- চিনি ৫ কেজি
- ডাল ১০ কেজি
- লবণ ৩ কেজি
- মাছ ও মুরগির মসলা ২০ প্যাকেট
- জামাকাপড়
- বাচ্চাদের ফিডার ২টি
- এবং হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা।

এসময় ক্যাপ্টেন আসলাম বলেন,
“আমরা শুধু দায়িত্ব পালন করতে আসিনি—আমরা মানুষ হিসেবে পাশে দাঁড়াতে এসেছি। মাতৃহারা এই শিশুটির মুখে যেন দুধ তুলে দেওয়া যায়, সেটাই ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য।”
পাহাড়ে মানবিকতার আলো
এমন এক সময় যখন পাহাড়ে কিছু সংগঠন “অধিকার” আদায়ের নামে সহিংসতা চালাচ্ছে, সাধারণ মানুষের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে চাঁদাবাজি করছে—সেই পাহাড়েই সেনাবাহিনী তাদের মানবিক উপস্থিতি দিয়ে দেখাচ্ছে, কীভাবে সত্যিকার অর্থে মানুষকে ভালোবাসা যায়।
নামনিয়ান ম্রো আবেগজড়িত কন্ঠে বলেন,
“কেউ আসেনি আমাদের কাছে, শুধু সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা এসেছে। ওরা বাচ্চার জন্য দুধ আনল, জামা আনল, হাতে টাকা দিল। মনে হলো আমরা একা না।”
স্থানীয় জনগণও এই উদ্যোগে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এক গ্রামপ্রধান বলেন,
“যে জায়গায় কেউ মুখ ফেরায় না, সেখানে সেনাবাহিনী আসে মায়ার হাত বাড়িয়ে। এই কারণেই মানুষ এখন তাদের বিশ্বাস করে।”
একটি শিশুর মুখে ফিরে আসা জীবনের আলো
এই সহায়তার মাধ্যমে একদিকে যেমন পরিবারটি স্বস্তি পেয়েছে, অন্যদিকে পুরো ঙুইখয় পাড়ায় ছড়িয়ে পড়েছে আশার বার্তা। বাচ্চাটির মুখে দুধ তুলে দিতে পারা শুধু এক মানবিক কাজ নয়—এটি পাহাড়ে রাষ্ট্রের স্নেহ ও উপস্থিতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,
“এটি এককালীন সহায়তা নয়। শিশুটির সার্বিক সুরক্ষায় ভবিষ্যতেও নিয়মিত নজরদারি, চিকিৎসা সেবা ও সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”
উল্লেখ্য, যে পাহাড়ে কখনও কেউ পাশে দাঁড়ায় না, সেখানে এক মাতৃহারা শিশুর মুখে দুধ তুলে দিয়ে বান্দরবান রিজিয়ন আবারও প্রমাণ করল—মানবিকতার সবচেয়ে বড় পরিচয় এখনো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীই বহন করছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।