রামগড়ের দুর্গম পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতির ছোঁয়া- অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালো বিজিবি
![]()
নিউজ ডেস্ক
দূর পাহাড়ের নিঃশব্দ পাড়াগুলোতে যখন জীবনের মৌলিক প্রয়োজনই কষ্টসাধ্য, তখন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) হয়ে উঠেছে মানুষের ভরসার নাম। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়স্থ ৪৩ বিজিবি জোনের উদ্যোগে আজ রবিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় রামগড় ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকাগুলোর গরীব ও অসহায় বাঙালি ও পাহাড়ি জনগণের মাঝে নিত্যপ্রয়োজনীয় সহায়তা ও অনুদান প্রদান করা হয়।
মানবিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে একদিকে যেমন মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে, অন্যদিকে পাহাড়ে শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে।

অসহায় পরিবারের মুখে ফিরল হাসি
রামগড় জোনের তত্ত্বাবধানে ২০টি দরিদ্র ও অসহায় পরিবারকে চাল, ডাল, তৈল, লবণ, আলু ও পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। পাশাপাশি বসতঘর নির্মাণের জন্য ২টি পরিবার ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে ১০ বান্ডিল ঢেউটিন প্রদান করা হয়।
এছাড়া ১টি দুস্থ পরিবারকে একটি সেলাই মেশিন এবং ৫টি পরিবারকে কৃষি উপকরণ (স্প্রে মেশিন, কোদাল ও বীজ) দেওয়া হয়, যাতে তারা নিজ উদ্যোগে জীবিকা গড়তে পারে।

স্থানীয় এক গ্রামবাসী বলেন,
“আমাদের মতো গরীব মানুষকে কেউ খোঁজও নেয় না। বিজিবি এসে শুধু সাহায্য দেয়নি, আমাদের জীবনে নতুন সাহস এনে দিয়েছে।”

শিক্ষার্থীদের হাতে খেলাধুলার সরঞ্জাম
শুধু খাদ্য বা অর্থ নয়—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আনন্দ ও বিকাশের কথাও ভেবেছে বিজিবি। চান্দপাড়া এবং দাতারামপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রিকেট ব্যাট, টেনিস বল, ফুটবল ও স্কিপিং রোপসহ খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান,
“পাহাড়ের বাচ্চাদের মুখে আজ যে হাসি দেখেছি, তা অমূল্য। বিজিবি আমাদের সন্তানদের স্বপ্ন দেখতে শিখাচ্ছে।”

চিকিৎসা ও শিক্ষায় আর্থিক সহায়তা
মানবিকতার অংশ হিসেবে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ১০ জন অসহায় ব্যক্তিকে মোট ২০ হাজার টাকা এবং শিক্ষা সহায়তা হিসেবে ৫ জন শিক্ষার্থীকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।
এই সহায়তা পেয়ে একজন শিক্ষার্থী বলেন,
“আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, আজ বিজিবির সহযোগিতায় আবার স্কুলে ফিরতে পারবো।”

ধর্মীয় উপাসনালয়ে অনুদান — সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশের বহুসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায়ও বিজিবি রাখছে অনন্য দৃষ্টান্ত। বল্টুরামপাড়া জামে মসজিদে ১০ হাজার টাকা, ফটিকছড়ির সরকারপাড়া হেফজখানা ও এতিমখানায় ১৫ হাজার টাকা, এবং দাতারাম পাড়া, দক্ষিণ দাতারাম পাড়া ও বল্টুরাম এলাকার কালী মন্দিরে ১২,৩৫০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
এই অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে মুসলিম, হিন্দু ও পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে অংশ নেন। এক স্থানীয় প্রবীণ বলেন,
“এটাই আসল বাংলাদেশ—যেখানে ধর্ম-বর্ণ পেরিয়ে সবাই মিলে শান্তির পথে হাঁটে।”

সীমান্তের প্রহরী, উন্নয়নেরও অগ্রদূত
রামগড় বিজিবি জোন দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত সুরক্ষা, মাদক ও চোরাচালান দমন, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও খেলাধুলার উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি নিয়মিত ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে আসছে তারা।
রামগড় জোনের একজন কর্মকর্তা জানান,
“আমাদের লক্ষ্য শুধু সীমান্ত পাহারা নয়—এলাকার মানুষকে শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের আলোয় আনা। বিজিবি সবসময় জনগণের পাশে থাকবে।”

মানবিক কার্যক্রম শেষে স্থানীয় জনসাধারণ বিজিবির মানবিক উদ্যোগে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন, “পাহাড়ে নানা সংগঠন আসে যায়, কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়ায় বিজিবি। তারা শুধু নিরাপত্তা দেয় না, মানবতার হাতও বাড়িয়ে দেয়।”
উল্লেখ্য, রামগড় বিজিবি জোনের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে—যে বাহিনী সীমান্ত পাহারা দেয়, সেই বাহিনীই মানবিকতার প্রহরী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সহায়তা প্রদান, শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি আর অসহায়দের জীবনে আশার আলো এনে তারা আবারও প্রমাণ করলো—শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নই পাহাড়ের প্রকৃত শক্তি।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।