টাস্কফোর্স সভা স্থগিত: বৈষম্যের অভিযোগে ক্ষুব্ধ পার্বত্য বাঙালিরা
![]()
নিউজ ডেস্ক
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের ১২তম সভা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আজ ১৯ অক্টোবর জারি করা এক স্মারকে এই তথ্য জানানো হয়।
স্মারক নম্বর ০৫.৪২.২০০০.০০০.০৩১.০৪.০০০৩.১৬.২৬৮–এ উল্লেখ করা হয়েছে, “অনিবার্য কারণবশত সভা স্থগিত করা হলো। সভার পরবর্তী তারিখ ও সময় যথাসময়ে জানানো হবে।”
সভাটি আগামী ২২ অক্টোবর সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান জনাব সুদত্ত চাকমার, যিনি সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করছেন।
বাঙালি পক্ষের আপত্তি
টাস্কফোর্সে বাঙালি প্রতিনিধিত্ব না থাকা এবং উপজাতীয়দের প্রতি প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে পার্বত্য বাঙালি নেতৃবৃন্দ সভা স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের মতে, এই স্থগিতাদেশ এসেছে “বাঙালিদের ন্যায্য দাবির প্রতিফলন” হিসেবে।
সম্প্রতি টাস্কফোর্সের একমাত্র বাঙালি প্রতিনিধি এডভোকেট মহিউদ্দীন কবীর পদত্যাগ করার পরও চেয়ারম্যান সুদত্ত চাকমা নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন। ফলে বাঙালিদের অভিযোগ—টাস্কফোর্স এখন কেবল উপজাতীয় স্বার্থরক্ষার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এক বাঙালি নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সভা স্থগিত না হলে বাঙালিদের অধিকার আরও ক্ষুণ্ন হতো। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি—বাঙালি প্রতিনিধি ছাড়া কোনো সভা হতে দেওয়া যাবে না।”
শান্তিচুক্তির পর থেকে বৈষম্যের ইতিহাস
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের মাধ্যমে টাস্কফোর্সটি গঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে এতে উপজাতীয়, বাঙালি, জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও সামরিক কর্মকর্তাসহ ১০ জন সদস্য ছিলেন। লক্ষ্য ছিল—ভারত থেকে ফিরে আসা উপজাতীয় শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং সংঘাতকালে বাস্তুচ্যুত উপজাতীয় ও বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে টাস্কফোর্সের কার্যক্রমে একতরফা নীতি দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ ও ২০২২ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো নির্দেশনাগুলোয় কেবল উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের তালিকা চাওয়া হয়, বাঙালিদের বাদ রেখে।
২০০০ সালে প্রশাসনিকভাবে অনুমোদিত ৯০,২০৮ জন উপজাতীয় এবং ৩৮,১৫৬ জন বাঙালি উদ্বাস্তু তালিকা তৈরি হলেও, জেএসএস ও শরণার্থী কল্যাণ সমিতির আপত্তিতে বাঙালিদের তালিকা বাতিল করা হয়।
২০০৯ সালে ১২,২২৩টি উপজাতীয় পরিবার (৬৪,৬১২ জন) পুনর্বাসিত হয়, কিন্তু একজন বাঙালিও এই সুযোগ পাননি।
অভিযোগ: ‘ভারতের নাগরিকও তালিকায় ঢুকেছে’
২০১৬–২০১৮ সালের মধ্যে টাস্কফোর্স অতিরিক্ত ২১,৯০০ শরণার্থী পরিবার এবং ৮২,০০০ অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পরিবার শনাক্ত করে। এর মধ্যে প্রায় ৩৮,০০০ অ-উপজাতীয় (বাঙালি) হিসেবে চিহ্নিত হয়। তবে এই তালিকায় ভারত ও মিয়ানমারের নাগরিক অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ ওঠে, যা স্থানীয় রাজনীতি ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তৎকালীন জনপ্রতিনিধিরা।
বাঙালি প্রতিনিধিদের অভিযোগ—এবারের বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পূর্ণ উপজাতীয়দের সুবিধা ঘিরে তৈরি, অথচ ১৯৯৭ সালের আগে শান্তিবাহিনীর হামলায় উদ্বাস্তু হওয়া হাজারো বাঙালি পরিবার এখনো পুনর্বাসনের অপেক্ষায়।
বাঙালি পক্ষের দাবি
বাঙালি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উত্থাপিত মূল দাবিগুলো হলো—
১. টাস্কফোর্স সভা বাতিল করে বাঙালি প্রতিনিধি নিয়োগ;
২. বৈষম্যমূলক পুরোনো স্মারকপত্র বাতিল;
৩. উপজাতীয় ও বাঙালি উভয়ের সঠিক ও স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন;
৪. টাস্কফোর্সের বিধিমালা সংশোধন;
৫. টাস্কফোর্স অফিসে বাঙালি কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ।
তারা সতর্ক করে বলেছেন—
“যদি বৈষম্য চলতে থাকে, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি প্রক্রিয়া ভেঙে পড়বে।”
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।