গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ সেনাবাহিনীর

গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ সেনাবাহিনীর

গাজীপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযান নিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগ সেনাবাহিনীর
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

গাজীপুরের শ্রীপুরে অস্ত্রসহ স্থানীয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মোল্লা (৪৮) এবং তার ছয় সহযোগীকে গ্রেফতারের ঘটনায় ফেসবুকে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুরের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ অভিযোগ করেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোর রাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশ ও র‌্যাবের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং এলাকাবাসীর সহায়তায় গাজীপুর জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তথা শ্রীপুর এলাকার ত্রাস, অবৈধ বালু উত্তোলনকারী এবং ডাকাত দলের সর্দার এনামুল হক মোল্লাকে তার নিজ বাসার পানির ট্যাংকের ভেতর থেকে গ্রেফতার করা হয়। একই সময় তার আরও ৬ জন সহযোগীকেও যৌথ বাহিনী গ্রেফতার করে।

‘গ্রেফতার এনামুল হক মোল্লা শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। তিনি মক্কা নগরীর মেসপালা বিএনপির সভাপতি ও বরমী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গ্রেফতার তার ছয় সহযোগী হলো– শওকত মীর (৪৫), জাহিদ মিয়া (৪০), মোস্তফা কামাল (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩৪), বুলবুল মিয়া (৩৫) ও তোফাজ্জল হোসেন (৪৫)।

‘অভিযান চলাকালে তল্লাশির সময় এনামুলের কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৩টি ম্যাগজিন, ৪ রাউন্ড গুলি, ২টি ইলেক্ট্রিক শক মেশিন, ৪টি ওয়াকিটকি সেট এবং ২টি লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এনামুল হক মোল্লার বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় বেশ কয়েকটি ডাকাতি এবং অস্ত্র মামলা চলমান রয়েছে। কিছু কিছু মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি করা হয়েছে।’

সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একটি মহল এনামুল হক মোল্লার গ্রেফতারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়াসহ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে দিয়ে অপপ্রচার করার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী কোনও ব্যক্তি বা দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় ন্যায়ের পক্ষে এবং অন্যায়ের বিপক্ষে। সেনাবাহিনী দেশের পক্ষে। যারা এ ব্যাপারে অপপ্রচার করছে এবং অপপ্রচারের প্রশ্রয় দিচ্ছে, আমরা মনে করি তাদেরও কোনও না কোনও ভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। সে বিষয়টিকেও আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি এবং প্রমাণ স্বাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানের সময় আপনারা  অনেকেই এই অপারেশনের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন এবং সবাই অবগত আছেন। কিছু সার্থান্বেষী মহল তার (এনামুলের) বাসা থেকে ব্যক্তিগত কিছু সরঞ্জামাদি হারানো গিয়েছে বলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরূপ মিথ্যা অপবাদ ছড়ানোর সঙ্গেও যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ব্রিফিংয়ে তিনি এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানান। যৌথবাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারেও তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য আহ্বান জানান তিনি। অপরাধীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক একইভাবে তাদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, এনামুল হক মোল্লা দীর্ঘদিন সৌদিতে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি দেশে ফেরেন। পরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে গ্রামের বাড়িতে আসেন। দেশে ফিরেই রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। বরমী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে এনামুল বরমীতে ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেয়েছিলেন। তার নামে একাধিক মামলা থাকায় নাম পরিবর্তন করে আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে ২০১৭ সালে সে সৌদি আরবে চলে যায়। মক্কা মেসফালাহ সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি পরিচয়ে সম্প্রতি শ্রীপুর উপজেলার সর্বত্র পোস্টার টানিয়ে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-সদরের একাংশ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করে ব্যাপক প্রচারণা চালান। গত সোমবার বিএনপির প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর তিনি নিজের ফেসবুকে গাজীপুর-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘গাজীপুর সেনা ক্যাম্পের মেজর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীরের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করে এনামুল হক মোল্লাসহ তার ৬ সহযোগীকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা করে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হলে আদালতের আদেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের এনামুলের বাড়িতে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। গাজীপুর অস্থায়ী সেনা ক্যাম্পের মেজর খন্দকার মহিউদ্দিন আলমগীরের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় এনামুল হক মোল্লা তার বাসার ছাদে পানি ট্যাংকের ভেতর গিয়ে আত্মগোপন করেন। পরে তল্লাশি করে তাকে বের করা হয়। অভিযানের শেষে উদ্ধার করা অস্ত্র ও সরঞ্জামসহ আটক সাত জনকে শ্রীপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed