দিনাজপুর সীমান্তে মানবপাচারকালে ভারতীয় নাগরিকসহ আটক ৬
![]()
নিউজ ডেস্ক
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী সীমান্তে পাচারকালে ভারতীয় নাগরিক ও নারী-পুরুষসহ ৬ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ফুলবাড়ী থানায় বিজিবি এ বিষয়ে মামলা করার পর পুলিশ আদালতের মাধ্যমে বিকেলে আটকদের জেল-হাজতে প্রেরণ করেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়ন রসুলপুর বিওপি সদস্যরা ফুলবাড়ী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী রসুলপুর (পলিপাড়া) গ্রামের মৃত জাহিরুল চৌধুরীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ১টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলার কাজীহাল ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার রসুলপুর বিওপি সীমান্ত ফাঁড়িতে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন, ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার। এরপর রাতেই আটককৃতদের ফুলবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সকালে মামলা দায়ের করে বিজিবি।
আটককৃতরা হলেন- ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মারগ্রাম গ্রামের নেপাল বর্মন (২৯), নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার শালবাড়ী গ্রামের জলি রাণী (৩০), পত্নীতলার বড়চাঁদপুর গ্রামের বিজন কুমার দাস (৫৫) ও তার স্ত্রী লিপি রাণী দাস (৪৭)। এছাড়া নেপাল বর্মন ও জলি রাণীর দুই শিশু মেয়েকে আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানান, ভারতীয় নাগরিক নেপাল বর্মন ২০২২ সাল থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশ থেকে নারী ও শিশু পাচার করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ২২ অক্টোবর হিলি পোর্ট দিয়ে বৈধভাবে বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশি নাগরিক দুই সন্তানের মা মৃত মিঠু চন্দ্রের স্ত্রী জলি রানীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২৬ অক্টোবর কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে পাচারের উদ্দেশ্যে বিবাহিত স্ত্রী জলি রানীকে দুই সন্তানসহ এবং বিজন কুমার দাস ও তার স্ত্রী শ্রীমতি লিপি রানীকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে ৪ নভেম্বর ফুলবাড়ী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত জাহিরুল চৌধুরীর বাড়িতে নিয়ে আসেন। এরপর ৪ নভেম্বর নেপাল বর্মন বৈধভাবে ভারতে গমন করে পুনরায় ৫ নভেম্বর হিলি পোর্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে নারী ও শিশুসহ ৫ জনকে ভারতে পাচারের জন্য রসুলপুর গ্রামের মৃত জাহিরুল চৌধুরীর বাড়িতে আসেন।
এদিকে ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নের অধীন রসুলপুর বিওপির একটি টহলদল গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, আন্তর্জাতিক শূন্য রেখা থেকে প্রায় ১৪০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকার রসুলপুর পলিপাড়া গ্রামের বাংলাদেশি নাগরিক মৃত জাহিরুল চৌধুরীর ছেলে আফিতের বাড়িতে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশের জন্য একত্র হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিজিবি সদস্যরা তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করে।
বিজিবি সূত্রে আরও জানায়, নেপাল বর্মন বাংলাদেশের বিরামপুর উপজেলার কাটলা বাজার এলাকার ভোলা, রোস্তম ও শহিদুল নামে তিন পাচারকারীর সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানব পাচারের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ফুলবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম খন্দকার মুহিব্বুল ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, বিজিবি সদস্যরা ভারতীয় নাগরিকসহ সংঘবদ্ধ মানবপাচার চক্রের ৬ সদস্যকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে। বিজিবি বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। শুক্রবার বিকেলে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
বিজিবি ফুলবাড়ী ২৯ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার জানান, সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি মাদক ও মানবপাচার প্রতিরোধে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক ও কঠোর অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। আটকদের ফুলবাড়ী থানায় সোপর্দ করে মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফকে কঠোর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।