বাংলাদেশের ভূখণ্ড অন্তর্ভুক্ত করে ফেসবুকে বিতর্কিত মানচিত্র পোস্ট করলেন ত্রিপুরার রাজা
![]()
নিউজ ডেস্ক
ভারতের ত্রিপুরা রাজবংশের উত্তরাধিকারী ও ত্রিপুরা মোথা পার্টির চেয়ারম্যান প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি মানচিত্র ও বিস্তর লেখাসহ পোস্ট প্রকাশ করেন, যেখানে তিনি ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’ নামে একটি প্রস্তাবিত ভূখণ্ড দেখিয়ে দিয়েছেন। ওই মানচিত্রে বাংলাদেশের বৃহত্তর কুমিল্লার ছয় জেলা (কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালি, লক্ষ্ণীপুর, ফেনী) ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাঁচ জেলা (চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার) — মিলিয়ে মোট ১১টি জেলা ত্রিপুরার সঙ্গে একভূত করে দেখানো হয়েছে।
প্রদ্যুৎ নিজ পোস্টে এসব অঞ্চলের ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক সংযোগ ও রাজনৈতিক যুক্তি উল্লেখ করে দাবি করেন যে পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেকে ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক কারণে ত্রিপুরার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ তাই ওই অঞ্চলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠেছে। পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক প্রসঙ্গে একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা দাবিও তোলেন — দিল্লি বিস্ফোরণসহ সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রসঙ্গে তিনি আইএসআই (ISI)–এর মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে তরুণদের প্ররোচনা, ঢাকায় ও চট্টগ্রামে পাকিস্তানি জেনারেল ও ব্রিগেডিয়ারের উপস্থিতি ইত্যাদি সংক্রান্ত বিবৃতি দেন এবং তা প্রকাশ্যেই সতর্কতা জানান।
প্রদ্যুৎ পোস্টে দাবি করেন, যদি ভারত সহযোগিতা করে তাতে চট্টগ্রাম বন্দরের দখল দ্রুত সম্ভব হবে—একটি আক্রমণাত্মক মন্তব্যও সেখানে থাকে।
তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টটি প্রকাশিত হতেই স্থানীয় ও আঞ্চলিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক মহল পোস্টটির বিষয়বস্তুকে বিভ্রান্তিকর, প্ররোচনামূলক ও সীমান্তগত সংবেদনশীলতা উস্কে দেওয়ার আশঙ্কায় সতর্ক করেছে।
স্থানীয় রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক পর্যায়ের কিছু সূত্র ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক জানিয়েছেন—কোনো বিদেশি বা আঞ্চলিক নেতা/দল যদি দেশের অভ্যন্তরীণ সীমা বা প্রশাসনিক একক বদলের দাবি করে তাহলে তা নীতি ও আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কেও জটিলতা ডেকে আনতে পারে।
ভারতের স্থানীয় প্রশাসন বা কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র থেকে ঘণিষ্ঠভাবে যাচাই করা কোনো মন্তব্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দফতর ও পুলিশের সূত্র বলেছেন, এমন ধরনের দাবি ও মানচিত্র যাতে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি করে সে বিষয়ে তারা অবগত আছেন এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর এমন দাবি সামাজিক ও সাংবিধানিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা বিচার করা জরুরি। তারা বলেন, সীমান্ত-সংলগ্ন চাহিদা, জাতিগত-সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ও ইতিহাস এক সূত্রমতো বিচার্য; কিন্তু রাষ্ট্রীয় সীমানা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়গুলো সহজভাবে প্রস্তাবিত করলেই চলবে না। আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক যোগাযোগ ও কূটনৈতিক স্বনির্ভরতা এই ধরনের দাবিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং স্থানীয় স্তরে অনেকেই প্রদ্যুৎ’র মানচিত্র প্রকাশকে উদ্বেগজনক ও উসকানিমূলক হিসেবে দেখছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলার প্রতিনিধিরা, প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ এবং স্থানীয় নাগরিকেরা শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন এবং এধরনের বক্তব্যে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টির সম্ভাবনার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। অনেকে বলেছেন, এমন প্রস্তাবনা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত দাবিসমূহ স্বাধীনভাবে যাচাই করা জরুরি। স্থানীয় প্রশাসন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এই বিষয়ে নিয়মিত নজর রাখতে হবে এবং যদি প্রয়োজন হয়, সামাজিক-আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে মিথ্যা বা উসকানিমূলক তথ্য প্রচারণা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে অনুপ্রবেশ-ভিত্তিক প্রচারণা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববর্মা কয়েক মাস ধরেই ভারতীয় গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ ও বিভিন্ন মঞ্চে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ‘গ্রেটার ত্রিপুরা’ ধারণা উত্থাপন করে আসছেন—যা আগে থেকেই বিতর্ক ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।