খাগড়াছড়ির গুইমারায় মোটরসাইকেল চালকের লাশ উদ্ধার, আটক ২
 
                 
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার গাজীনগরে বিজিবির গুলিতে এক বিজিবি সদস্য ও চার গ্রামবাসীসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় রেশ না কাটতেই এবার জেলার গুইমারাতে মোটর সাইকেল চালক আকিব উদ্দিন রাকিব (১৮) কে অপহরণের পর হত্যা ও মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গুইমারা উপজেলা। ৫ই মার্চ বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনার প্রতিবাদে জালিয়াপাড়া চৌরাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধসহ বিক্ষোভ করে স্থানীয়রা। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ অবরোধ। এসময় পুলিশ বহণকারী একটি মাহিন্দ্র পিকআপসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে উত্তেজিত জনতা। এ ঘটনায় ২জন আহত হয়েছে। এছাড়া ঘটনার জন্য গুইমারা থানার ওসি বিদ্যুৎ বড়ুয়ার অবহেলাকে দায়ী করে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার দাবি করেছে নিহত রাকিবের পরিবারসহ স্থানীয়রা। এদিকে দুপুর ২টার দিকে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুবিচারের আশ্বাসে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
জানা যায়, গত ৩রা মার্চ মঙ্গলবার রাতে পাহাড়ী জুয়ার মেলায় আগত ওয়াংচিং মারমা ও সাচিং মারমা নামের দুই ঘাতক যাত্রী হিসেবে চালক আকিব উদ্দিন (১৮)’র মোটরসাইকেল ভাড়া করে সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডস্থ আমতলপাড়া এলাকায় গলাটিপে হত্যা করে তার মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে মহালছড়ি এলাকায় পালিয়ে যায়।
নিহত আকিব উদ্দিনের পিতা ইকবাল হোসেন জানান, ঘটনার রাতে একই এলাকার মন্টিং মারমা ছেলে সাসিং মারমা মোটর সাইকেল ভাড়ার কথা বলে আকিবকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে উভয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ৪ঠা মার্চ সকালে তিনি পার্শ্ববর্তী লোকজনকে বিষয়টি জানায়। পরে তিনি গুইমারা থানায় বেশ কয়েকবার অভিযোগ করতে গেলে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া অভিযোগ না নিয়ে পাল্টা অশ্লীল গালাগালি করে তাকে পাগল বলে থানা থেকে বের করে দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি সেনাবাহিনীকে অবগত করেন এবং ৯৯৯ এ কল দিলে রাত ১২টায় ওসি অভিযোগটি অপহরণ মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়।
আকিব উদ্দিনের পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে গুইমারা থানা পুলিশ বুধবার রাত ৩টায় মহালছড়ি উপজেলা থেকে দুই ঘাতককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে সিন্দুকছড়ির ৯নং ওয়ার্ডের আমতলপাড়া এলাকা থেকে নিহত আকিবের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আকিবের লাশ ময়না তদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে বাঙালি মোটর সাইকেল চালক’কে অপহরণ করে হত্যা ও মোটর সাইকেল ছিনতাই করার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ৫ মার্চ সকাল থেকেই খাগড়াছড়ি-ফেনী-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক মহা-সড়কের জালিয়াপাড়া চৌরাস্তায় স্থানীয় বাঙালিরা সমবেত হয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে করে। এতে করে বেশ কয়েক ঘন্টা খাগড়াছড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর তা স্বাভাবিক হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।
এদিকে গুইমারা থানার ওসির অবহেলা ও বাদীকে গালাগালি করায় জালিয়াপাড়ায় চৌরাস্তায় স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়ার অপসারণ দাবি করে পুলিশবক্সের ভিতরে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আকিব হত্যার ঘটনায় এখন গুইমারা উপজেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।
এছাড়া আকিব হত্যার ঘটনায় তার বাবার দায়ের করা অপহরণ মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গন্য করে তদন্ত করা হবে বলে জানান ওসি বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া। খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম সালাউদ্দিনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ গুইমারায় অবস্থান করছেন বলেও জানান তিনি।
