পাহাড়জুড়ে ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস (OMS) চাল ক্রয়ে ক্রেতাদের উৎসাহ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় করোনা শঙ্কা হ্রাস এর চেষ্টা
ছবি- রাঙামাটি পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের (ওএমএস) ডিলার প্রতাপ দাশের দোকানে ১০টাকা দরে চাল ক্রয় করতে আসা উৎসুক জনতা।
![]()
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি সদরের ৯টি পৌর ওয়ার্ড, রাঙামাটি জেলার ৯টি ওয়ার্ড এবং বান্দরবান জেলার ৯টি ওয়ার্ডে ওএমএস প্রোগ্রাম এর অংশ হিসেবে ১০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৮ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রয় প্রক্রিয়ায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে। রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার এই প্রোগ্রামের কার্যক্রম চলবে বলে জানা যায়। তবে কিছু কিছু জায়গায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অধিক তৎপর থাকতে হয়েছে সাধারণ মানুষদের অতি উৎসাহী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এর পরিবেশ সৃষ্টি নিবৃত করতে। আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে এই প্রোগ্রাম এর সিদ্ধান্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষদের করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি ছিলো। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকরী তৎপরতা যথেষ্ট ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
গত ২৬ মার্চ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময়ে অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। শহর এলাকায় বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ রয়েছে। এতে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন শহরে বসবাসরত খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠী, হকার, রিকশা, ভ্যানচালক, দিনমজুর, বাস ড্রাইভার ও হেলপার। যারা এ পরিস্থিতিতে শহরে রয়েছেন তাদের এ সুবিধা দেওয়াই হচ্ছে সরকারের মূল উদ্দেশ্য । তবে এবার পূর্বের মতো শুধু কার্ডধারীরাই নয় সমাজের সবাই নিজেদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে এ চাল কিনতে পারবেন।

সকাল ১০টায় রাঙামাটিতে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া বান্দরবান বাজারের (ওএমএস) ডিলার বিমল কান্তি দাশের দোকানে এই ১০ টাকা মূল্যের চাল বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ শামীম হোসেন। পাশাপাশি খাগড়াছড়িতে কোন প্রকার উদ্বোধন ছাড়াই চাল বিক্রয় শুরু করে ডিলাররা।
সকাল থেকে এসব কার্যক্রম পরিদর্শন করেন স্ব স্ব জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। একটি পরিবারের একজনই ৫ কেজি চাল নিতে পারবেন। তবে সেটি অনেকেই মানছে না। একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে লাইনে দাঁড়িয়ে চাল নিতে দেখা গেছে। (ওএমএস)’র মাধ্যমে নির্দিষ্ট ৯ ওয়ার্ডের নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি করে চাল কিনতে পারছেন। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ফটোকপি জমা দিয়ে চাল নিচ্ছেন তারা।
সার্বিক বিষয়ে সমাজ এর বিশিষ্টজনেরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুন্নাহার জানান, আগে যেসব ডিলারের মাধ্যমে সরকার ওএমএস কার্ডধারীদের মাঝে সরকার ন্যায্যমূল্যে চাল বিক্রয় করতো সেসব ডিলারদের দিয়েই এবার সকল জনসাধারণের মাঝে ন্যায্যমূল্যে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। জেলার কিছু কিছু ওয়ার্ডের ডিলার পয়েন্টে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এসব চাল বিক্রয় করা হলেও বেশ কয়েকটি জায়গায় জনগন সামাজিক দূরত্ব মানছেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত একমাস ধরে মাইকিং করে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সচেতন করে আসলেও দুঃখজনকভাবে জেলা সদরের লোকজন সেসব মানছেন না। পুলিশ ও ম্যাজিষ্ট্রেটেটের সামনেও তারা ভিড় করে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে চলেছেন। তবে এ বিষয়ে আরো কঠোর হতে তিনি ম্যাজিষ্ট্রেটদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

রাঙামাটি সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ শহীদুজ্জামান মহসীন রোমান বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় উপায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। ওএমএস এর চাল বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছেনা জানিয়ে তিনি বলেন, যাদের মাধ্যমে এসব চাল বিক্রয় বা যারা বিষয়গুলো নির্ধারণ করে দেন তাদের উচিত ছিলো, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব চাল দুঃস্থ ও কর্মহীনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, তাহলে অন্তত করোনার ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হতো। বর্তমান অবস্থায় চাল বিতরণ অব্যাহত থাকলে করোনা ঝুঁকি বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন এই জনপ্রতিনিধি।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ জানান, ‘আমরা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দিনমজুর শ্রমিক, কর্মহীন যত মানুষ আছে তাদের ঘরে ঘরে আমরা খাদ্য সামগ্রী ইতিমধ্যে পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি। ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রনালয় থেকে আমরা যে ত্রাণ পেয়েছি তা আমরা ঘরে ঘরে দিয়ে এসেছি। আর ১০ টাকা মূল্যের চাল এইটা আজকে থেকে বিতরণ করা শুরু হয়েছে। এইটা সপ্তাহে তিনদিন রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার দেওয়া হবে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে দুই মেট্রিক টন অর্থাৎ ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ১৮ মেট্রিক টন দেওয়া হবে ওএমএস আন্ডারে, এটি সরকারের বিশেষ ওএমএস। আপনারা জানেন আগে ওএমএস এর প্রতিকেজি চালের মূল্য ছিলো ৩০ টাকা। সরকার বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় দিনমজুর শ্রমিক, কর্মহীন মানুষের সাহায্যার্থে এখন প্রতিকেজি চাল ১০ টাকা নির্ধারন করে প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ মেট্রিকটন প্রতিদিন দেওয়া হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪০০ পরিবার এ চাল পাবে এই স্বল্প মূল্যের চাল।
তিনি বলেন, আজকে রাঙামাটি জেলার ৯টি ওয়ার্ডে তিন হাজার ছয়শত পরিবারের হাতে ৫ কেজি করে ১০ টাকা মূল্যের চাল পৌঁছে যাবে এবং এরা আবার আগামী রবিবারে এই চাল নিতে পারবে। অর্থাৎ দেখা গেছে এক সপ্তাহে দশ হাজার আটশত পরিবারকে ৫ কেজি করে ১০ টাকা দরে দিতে পারবো।