রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে জমি অধিগ্রহণের তিন বছরেও শুরু হয়নি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণকাজ - Southeast Asia Journal

রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে জমি অধিগ্রহণের তিন বছরেও শুরু হয়নি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের নির্মাণকাজ

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের জন্য ৩৩ শতক ভূমি অধিগ্রহণ করা হলেও এখনো শুরু হয়নি কোনো কার্যক্রম। এতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে অধিগ্রহণকৃত ভূমি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অভাবে দুই বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা প্রকল্প কার্যালয়সহ একাধিক বাজার ও ঘরবাড়ি পুড়েছে চোখের সামনে। অগ্নিনিরোধক ব্যবস্থার অভাবে অনেক পরিবার ও ব্যবসায়ীকে নিঃস্ব হতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্ত বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১ হাজার ৯৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা বাঘাইছড়িতে রয়েছে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন। এ উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এ উপজেলার নৌ-পথে দূরত্ব ১৪৪ কিলোমিটার আর খাগড়াছড়ি হয়ে সড়ক পথে ১৪৬ কিলোমিটার। প্রায় তিন বছর আগে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য উপজেলা সদরের পৌর এলাকার হাজীপাড়ায় ৩৩ শতক জায়গা অধিগ্রহণ করা হলেও অদ্যাবধি স্টেশন স্থাপনের কাজ শুরু হয়নি। বর্তমানে অধিগ্রহণকৃত ভূমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তাই উপজেলার কোথাও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে আগুন নেভাতে হয় এলাকাবাসী ও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে বাঘাইছড়ির দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার হলেও বেহাল সড়কের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতেও সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। আর এ সময়ের মধ্যেই আগুনে পুড়ে যায় সব।

উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ বাজার হলো দূরছড়িবাজার। এ বাজারে ২০২১ ও ’২২ সালে দুই দফায় ১০২টি দোকান ও বসতঘর পুড়েছে, বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানকার মানুষ। এর মধ্যে ২১ জুলাই আগুনে ৬৯টি দোকান, গুদাম ও ঘর এবং ২০২১ সালের ২৪ মে ১২টি দোকান ও ২১টি বসতঘর পুড়ে যায়। ফায়ার স্টেশনের অভাবে দ্রুত সময়ের মধ্যে আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। এভাবেই একবারের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই নিঃস্ব হচ্ছেন তারা। দূরছড়ি বাজারের বাসিন্দা মো. রফিক বলেন, আগুন লাগলে আমরা যত চেষ্টাই করি না কেন, যতক্ষণ পাশাপাশি দোকান বা বাড়ি থাকে ততক্ষণ আগুন জ্বলতে থাকে। এতে এক এক করে আমরা আগুনে সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হই। পার্শ্ববর্তী দীঘিনালা উপজেলা থেকেও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আসতে সময় লাগে কমপক্ষে ঘণ্টাখানেক। এটি শুধু দূরছড়ি বাজারের চিত্র নয়, উপজেলা সদর এবং আশপাশে বিভিন্ন সময় আগুন লাগলেই একমাত্র ভরসা দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৪ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প কার্যালয়টি পুড়ে ছাই হয়ে যায়, পুড়ে যায় সব নথি। ওই সময় দীঘিনালা ফায়ার সার্ভিস এসে যদিও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর একই বছরের ২৯ মে বঙ্গলতলী ইউনিয়নে বসতঘর পুড়ে নিঃস্ব হন ভাগ্যধন চাকমা। কিন্তু বছর পার হলেও সেই ভাগ্যধনের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, হয়নি কাঙ্ক্ষিত ফায়ার স্টেশন স্থাপন।

উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সন্তোষ কুমার চাকমা জানান, বাঘাইছড়ি সদরে ফায়ার স্টেশনের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ হলেও এখনো সেখানে স্টেশন স্থাপন হয়নি। যার কারণে আগুন লাগলে তা সহজে নেভানো যায় না। পার্শ্ববর্তী খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা থেকে ফায়ার সার্ভিস আসতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। কিন্তু যদি বাঘাইছড়ি সদরে ফায়ার স্টেশন হতো তাহলে সেটি দূরছড়ি বাজারে আসতে সময় লাগত ১৫ মিনিটের মতো। এতে আগুনে ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে যেত।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে আমরা এরই মধ্যে চিঠি পাঠিয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে আবারো পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমা জানান, এরই মধ্যে ফায়ার স্টেশনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এখন বাকি স্টেশন নির্মাণকাজ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সব পর্যায়ে কথা বলেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই এটা হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখের বিষয়। এখানে দ্রুত ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রয়োজন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স রাঙ্গামাটি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েক বছর আগে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশনের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে ফায়ার স্টেশন স্থাপনে আরো একটি প্রকল্প স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পটি পাস হলে তা গণপূর্ত বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। গণপূর্ত বিভাগ রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী অনিন্দ্য কৌশল জানান, সারা দেশে ১৫৬টি ফায়ার স্টেশনের কাজ চলমান। এর মধ্যে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী ও লংগদু উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের কার্যক্রম চলমান। যতটুকু জেনেছি, সামনের প্রকল্পে বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশন তালিকায় রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো চিঠি বা অর্ডার আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বাঘাইছড়ি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের বিষয়টি জেলা প্রশাসক সম্মেলনে আমি উপস্থাপন করেছি। এটি সরকারের বিবেচনায় আছে। আশা করছি দ্রুত হয়ে যাবে।