শর্তভঙ্গ করে বান্দরবানে বিদেশি নাগরিকদের ধর্মীয় কার্যক্রম: পর্যটনের আড়ালে গোপন ধর্মান্তর প্রচেষ্টা

শর্তভঙ্গ করে বান্দরবানে বিদেশি নাগরিকদের ধর্মীয় কার্যক্রম: পর্যটনের আড়ালে গোপন ধর্মান্তর প্রচেষ্টা

শর্তভঙ্গ করে বান্দরবানে বিদেশি নাগরিকদের ধর্মীয় কার্যক্রম: পর্যটনের আড়ালে গোপন ধর্মান্তর প্রচেষ্টা

হোটেল ডি’মোর বান্দরবান।

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে ভ্রমণের নামে প্রবেশ করে সরকারি শর্ত ভঙ্গ করে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ১২ জন নাগরিক। তারা “লাইফ ওয়ার্ড মিশন (Life Word Mission)” নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে হোটেল ডি’মোর-এ গোপনে ধর্মীয় সভা আয়োজন করেন।

গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত চলা এই সভায় বাইবেল পাঠ, উপদেশ এবং ধর্মীয় প্রচারণা চালানো হয় বলে প্রশাসনিক অনুসন্ধানে জানা গেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী, ২০ অক্টোবর দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার ১১ জন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ১ জন নাগরিকসহ মোট ১২ জন বিদেশি একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে বান্দরবানে প্রবেশ করে। পরে তারা হোটেল ডি’মোর-এ অবস্থান নেন। বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে উক্ত হোটেলের হলরুমে “Life Word Mission” সংগঠনের উদ্যোগে এক ধর্মীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিদেশিদের পাশাপাশি তাদের স্থানীয় সহযোগী, বান্দরবান সদর ও হাতিভাঙা এলাকার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ৮০-৯০ জন অংশগ্রহণ করেন। সভায় খ্রিস্টীয় ভক্তি সংগীত, প্রার্থনা ও বাইবেল পাঠের মাধ্যমে ধর্মীয় প্রচার চালানো হয়।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকদের বান্দরবানে প্রবেশের অনুমতি কেবল পর্যটন বা ভ্রমণ উদ্দেশ্যে (শর্তসাপেক্ষে) প্রদান করা হয়। অনুমতিপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে— তারা কোনো ধরনের সামাজিক, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু উক্ত নাগরিকরা সেই শর্ত ভঙ্গ করে গোপনে ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বিদেশিদের পরিচয়

বান্দরবানে ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়া বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংসান পার্ক, সুমি লি, বংসুন পার্ক, ইওন কিয়ং ও, ইওন কিয়ং বাইক, চ্যাংহো চো, হুন ইল চোই, সন উং কিম, চ্যাং সান চোই, হিউং ইল কিম, চোল ই হং এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ইয়ানা কিম। তারা ২০ অক্টোবর পর্যটক হিসেবে বান্দরবানে প্রবেশের অনুমতি নেন এবং হোটেল ডি’মোরে অবস্থান করেন।

পরবর্তীতে তারা আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ স্কটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

গাইডের ভূমিকা ও সন্দেহজনক সংযোগ

প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, বিদেশিদের স্থানীয় গাইড ছিলেন লালফুনথাং বম। জানা যায়, তিনি বম সম্প্রদায়ের একজন সদস্য, যাদের একটি অংশ কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) নামের সশস্ত্র সংগঠন গঠন করে বান্দরবানে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে প্রশাসন এই বিদেশি নাগরিকদের কার্যক্রমের সঙ্গে কোনো নাশকতা বা ধর্মীয় প্রভাব বিস্তারের যোগ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে।

May be an image of one or more people and tree

নাগরিক পরিষদের বিক্ষোভ ও নিন্দা

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ বান্দরবান শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে সেখানেই শেষ হয়।

বক্তারা অভিযোগ করেন—

“পর্যটনের নামে বিদেশিরা পাহাড়ে এসে দরিদ্র ও সরল পাহাড়িদের ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের চোখের সামনে এই অপতৎপরতা চলতে পারে না।”

তারা বান্দরবানে বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণ অনুমতি প্রদানে আরও কঠোরতা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীকে এসব কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানান।

প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, “Life Word Mission” সংগঠনটি বাংলাদেশে নিবন্ধিত নয়, তহবিলের উৎস ও কার্যক্রমের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট নয়। তারা ভ্রমণের ছদ্মবেশে ধর্মীয় প্রচার চালিয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করছে বলে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে এবং ভবিষ্যতে বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই আরও কঠোর করা হবে।

বান্দরবানে বিদেশি নাগরিকদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল সরকারের ভ্রমণ নীতির লঙ্ঘন নয়— এটি পার্বত্য অঞ্চলের সংবেদনশীল ধর্মীয় ও সামাজিক পরিবেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। স্থানীয়দের দাবি, “পাহাড়ে ভ্রমণের নামে ধর্মান্তর প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না”— আর প্রশাসনের দায়িত্ব, সেই আস্থা রক্ষা করা।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি এনজিও’র আড়ালে গোপনে চলমান মিশনারী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এসব ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনজিও’র আড়ালে পরিচালিত এই মিশনারী কার্যক্রমে সহযোগিতা ও অর্থায়ন দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য খ্রিস্টান দেশ ও প্রতিষ্ঠান। গোপন এই চক্রান্তের লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে দীর্ঘমেয়াদে খ্রিস্টান প্রভাববিস্তার এবং ধর্মীয় পরিচয়ের পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি ভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed