১১ মাসে বিএসএফের গুলিতে ২৮ বাংলাদেশি নিহত, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ
![]()
নিউজ ডেস্ক
সীমান্তে হত্যা বন্ধ হলে বাংলাদেশিদের ভারত বিদ্বেষী মনোভাব কমতে পারে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, দীর্ঘ দিনের এ সমস্যা সমাধানে দেশটির রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার বন্ধে দিল্লির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ৭ দেশের। এর মধ্যে বিএসএফের গুলিতে সর্বোচ্চ হত্যার ঘটনা ঘটে বাংলাদেশ সীমান্তে। গত ১১ মাসে বিএসএফের গুলিতে ২৮ বাংলাদেশি নিহতের তথ্য দিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। তাদের হিসাবে, গত ১১ বছরে নিহত হয়েছে ৩৪৫ জন। আওয়ামী লীগ আমলেও বছরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য মতে, সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ২০১৪ সালে ৩২ জন, ২০১৫ সালে ৪৬ জন, ২০১৬ সালে ৩১ জন, ২০১৭ সালে ২ জন, ২০১৮ সালে ১৫ জন, ২০১৯ সালে ৪৩ জন, ২০২০ সালে ৪৯ জন, ২০২১ সালে ১৮ জন, ২০২২ সালে ২৩ জন এবং ২০২৪ সালে ৩০ জন নিহত হয়েছে।
সীমান্তে গুলির জন্য অবৈধ অনুপ্রেবেশকে যুক্তি দেখাচ্ছে ভারত। তবে বাংলাদেশের অভিযোগ, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে ভারত। সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে প্রতিশ্রুতিও ভঙ্গ করছে।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশের মতো ভারতও উদ্বিগ্ন। তবে ভারতীয় সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানবপাচার, চোরাকারবার ও অস্ত্র পাচার হয়। এগুলো বন্ধ হলে সীমান্তে হত্যাও বন্ধ হয়ে যাবে। নিজের ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে বিএসএফ। চার হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্তের অধিকাংশ ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়েছে। বাকি অংশে বেড়া দেয়া শেষ হলে সীমান্তে অপরাধ কমবে।’
এ নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত পৃথিবীর একমাত্র সীমান্ত, যেখানে মানুষকে গুলি করে মারা হয়। এটাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছেন দিল্লি। অপরাধ হয়েছে বলে ইত্যাদি ইত্যাদি… অপরাধ হলে কোর্টে সোপর্দ হবে। কোর্ট তাকে শাস্তি দেবে। আমি স্পষ্টভাবেই বলেছি, এটার কোনো সমাধান আমি আপাতত দেখছি না।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে, ৯ দিনের মধ্যে ঠাকুরগাঁও সীমান্তে দুই বাংলাদেশি বিএসএফের গুলিতে নিহত হন। এই উদাহরণ টেনে বিশ্লেষকেরা বলেন, অনুপ্রবেশের শাস্তি বিচারবহির্ভূত হত্যা হতে পারে না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান বলেন, ‘যদি কোনো চোরাকারবারি বা অন্য কোনো তৎপরতা সেখানে থেকে থাকে, যেকোনো কারণে মানুষকে হত্যা করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ভারতের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের যে একটা বিরূপ ধারণা জন্মায়, তার একটা প্রধান কারণ হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। এর থেকে আমাদের মধ্যে যে ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকার কিছু অন্তরায় আছে, তার মধ্যে একটা প্রধান অন্তরায় এটা।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকারে যারা আছেন তাদের কাছে আমরা বিভিন্ন সময় চিঠি দিয়ে একটা কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের ওপর এক ধরনের একটা চাপ আনা যায়।’
২০১৪ সালে সীমান্তে মারণাস্ত্র ব্যবহার বন্ধে ২ দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। কিন্তু তা নিয়মিত উপেক্ষা করছে ভারত, মন্তব্য বিশ্লেষকদের।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।