মিয়ানমারে রোহিঙ্গা হত্যায় সম্পৃক্ততা স্বীকার দেশটির ২ সেনা সদস্যের
 
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে মিয়ানমারে সেদেশের সেনাবাহিনী কর্তৃক হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান হত্যা, নির্যাতনসহ গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা স্বীকার করে নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছে জাও নাইং তুন (৩০) ও মিও উইন তুন (৩৩) নামের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দুই সদস্য। গত মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক টাইমস এবং কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশন-সিবিসি ও একটি মানবাধিকার সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৭ সালের আগষ্টে দেশটির আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও অগ্নি সংযোগ সংগঠিত করে দেশটির সেনাবাহিনী। এবিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান থাকার মধ্যেই রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা, ধর্ষণ এবং তাদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা স্বীকার করেছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই সৈনিক জাও নাইং তুন (৩০) ও মিও উইন তুন (৩৩)। তারা নিজেদের ব্যাটালিয়ন, কমান্ডিং অফিসারের পরিচয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের নানা অপরাধের ঘটনাও বর্ণনা করেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ দুই সৈনিক। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সৈনিক পরিচয় দেয়া দুই ব্যক্তি এখন নেদারল্যান্ডসের হেগে রয়েছেন। গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, তাদেরকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাজির করা হতে পারে। ৩০ বছরের জাও নাইং তুন এবং ৩৩ বছরের মিও উইন তুনকে প্রথম দেখা যায় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির ইউটিউব চ্যানেলে । এ বছরের ২২ মে এই দুইজনসহ মোট চারজনকে দেখা যায় মিয়ানমার আর্মির পোশাক পরে বসে থাকতে। চারজনই দাবি করেন, নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে পালিয়েছেন। তবে, কীভাবে এবং কার তত্ত্বাবধায়নে তারা হেগে পৌঁছালো-বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
এই দুই সেনা সদস্য আরকান আর্মির হাতে বন্দি হয়েছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে খিন থু খা নামের আরাকান আর্মির এক মুখপাত্র বলেন, দুই ব্যক্তিকে সেনা বাহিনী থেকে বাদ দেয়া হয়, তাদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক করা হয়নি। তবে তারা এখন কোথায় আছে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, ওই দুই সেনাসদস্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে ছিল। গোষ্ঠীটির সঙ্গে বর্তমানে রাখাইনে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকার সময় ওই দু’জন ভিডিও বিবৃতি দেয়। পরে তাদের নেদারল্যান্ডের হেগে নেওয়া হয়। সেখানে রোহিঙ্গা নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তাদের সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে। তবে ওই দুই সেনা সদস্য কীভাবে আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়লো, কেন তারা বিবৃতি দিয়েছে, কিংবা কীভাবে এবং কার তত্ত্বাবধায়নে তারা হেগে পৌঁছালো-বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
আইসিসিতে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী পায়াম আখাভান বলেন, দুইজনকে নিরাপত্তার মধ্যে একটি সীমান্ত পোস্টে আনা হয়। তারা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নরনারীদের গণহত্যা ও ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে। তিনি বলেন, “আমি এটুকুই বলতে পারি, তারা এখন আর বাংলাদেশে নেই।”
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগষ্টে দেশটির আরাকান রাজ্যে একটি পুলিশ পোস্টে হামলার অভিযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয় প্রায় সাড়ে ৭লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এর আগেও মিয়ানমার থেকে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির।
এ ঘটনার পর গতবছরের ১১ নভেম্বর ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-তে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। সম্প্রতি এ মামলায় নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে সহায়তার ঘোষনা দিয়ে কানাডা ও ইন্দোনেশিয়া।
