রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদ ও ইউপিডিএফ (প্রসীত)কে নিষিদ্ধের দাবি - Southeast Asia Journal

রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদ ও ইউপিডিএফ (প্রসীত)কে নিষিদ্ধের দাবি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

 

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী পাহাড়ের আঞ্চলিক উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন প্রসীত পন্থি ইউপিডিএফ কর্তৃক অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ পাহাড়ীদের দিয়ে আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানানোকে অপপ্রচার ও গণবিরোধী কার্যক্রম দাবি করে এর প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে অনতিবিলম্বে ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের নেতা-কর্মীরা। ১১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়িতে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

দীঘিনালায় সংগঠনটির সমন্বয়ক জনপ্রিয় চাকমা ও পানছড়িতে সমন্বয়ক দীপন আলো চাকমার নেতৃত্বে মতবিনিময় সভায় উপজেলার বিভিন্ন মৌজার হেডম্যান-কার্বারী ও সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ বছরের পর বছর সাধারণ পাহাড়ীদের কাছে থেকে অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়, অপহরণ, খুনসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে ইউপিডিএফ আবার অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ঐক্যর নামে নতুন করে পাহাড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে। এসময় তিনি পাহাড়বাসীর উন্নয়নে সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে ইউপিডিএফ নেতাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্নসমর্পনের আহবানও জানান।

বক্তারা, প্রসীত বিকাশ খীসা ও তার দল ইউপিডিএফ সম্প্রতি নতুন ভাবে পাহাড়কে অশান্ত করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে মন্তব্য করে বলেন, “ইউপিডিএফের হাতে নিহত নিরীহ পাহাড়ীদের স্বজনরা কি ভাবে নিজেদের আত্নীয়-স্বজন হত্যার কথা ভূলে গিয়ে ইউপিডিএফের সাথে ঐক্য করবে?” তাদের মতে, সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হয়েই ইউপিডিএফ ঐক্যের নামে পাহাড় নিয়ে নতুন চক্রান্ত করছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার ও তৎকালীন শান্তিবাহিনী (বর্তমানে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস)’র শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে দুই যুগের সশস্ত্র সংঘাতের অবসান হলেও চুক্তির পরপরই পাহাড়ে গড়ে উঠে আরেক সংকট- ‘ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত’। সেসময় পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করেই পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে জন্ম নেয় পাহাড়ীদের আরেকটি নতুন দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। তাদের যুক্তি ছিলো, সরকারের সাথে পার্বত্য চুক্তি নয়, অস্ত্রের মাধ্যমে তারা পাহাড়ীদের অধিকার রক্ষা করবে। মূলত পার্বত্য চুক্তির বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ এর জন্ম হলেও, চুক্তির বিরোধীতা না করে চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানাতে থাকে সংগঠনটি। ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আনুষ্ঠানিক এক কনভেনশনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে এবং বিরোধে জড়িয়ে পড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর সাথে। পরবর্তীতে আবারো ভাঙনের মুখে পড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন মূল জেএসএস। দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন, স্বজন প্রীতি, সন্তু লারমার একনায়কতান্ত্রিক মনোভাব সহ নানা বৈষম্যের অভিযোগে তৎকালীন জেএসএস নেতা রুপায়ন দেওয়ান, সুধা সিন্ধু খীসা, তাতেন্দ্র লাল চাকমাদের নেতৃত্বে গত ১০ এপ্রিল ২০১০ সালে গড়ে উঠে জেএসএস (এমএন লারমা) নামের নতুন আরেকটি সংগঠন।

এদিকে, প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফের আদর্শের বুলি শুনে সে দলে ভিড়তে থাকা নেতারাও কয়েক বছর পর আদর্শের নামে রক্তপাত, এলাকার দখলদারিত্ব, দখল নিয়ন্ত্রনে রাখতে স্বজাতি হত্যা, নেতা-কর্মীদের সাথে বৈষম্য, স্বেচ্ছাচারিতা, প্রতিপক্ষের কর্মসূচীতে বাধা প্রদানসহ আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে নেতারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে অভিযোগ এনে ২০১৭ সালের ১৫ই নভেম্বর বেলা ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খাগড়াপুর কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ইউপিডিএফের প্রভাবশালী নেতা তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মার নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন সংগঠন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। ঐদিন তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছিলেন, আন্দোলন পরিচালনার কৌশল সঠিক না হওয়ার কারণে ইউপিডিএফের অনেক নেতা-কর্মী দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগ করার অপরাধে অনেক নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক, বলপ্রয়োগের রাজনীতি, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, অপহরণ, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জাতীয় দিবস বর্জনের রাজনীতি করছে ইউপিডিএফ। তিনি বলেন, ‘ইউপিডিএফের অনেক নেতা এখন পকেট ভারী নেতা হিসেবে পরিচিত। মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হয়ে নীতিহীন, আদর্শহীন, লক্ষ্যভ্রষ্ট, দুর্নীতিগ্রস্ত দলে পরিণত হয়েছে। এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীদের আর্থিক দণ্ড ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ইউপিডিএফের বর্তমান নেতৃত্ব জুম্ম (পাহাড়ি) জনগণ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন।

এদিকে, দীর্ঘদিন বিরোধ থাকলেও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সাথে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ’র সম্পর্ক বর্তমানে বেশ হৃদ্যতাপূর্ণ বলে জানা গেছে। একটি সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির সাথে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ’র মধ্যে, নিজেদের মধ্যে রক্তপাত না ঘটনো এবং এলাকা ভাগাভাগি করে চাঁদাবাজি ও এলাকার নিয়ন্ত্রন ধরে রাখা নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এই দুদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান বলে জানা গেছে।