পাহাড়ে ব্রোকলি চাষে কৃষকের মুখে হাসি - Southeast Asia Journal

পাহাড়ে ব্রোকলি চাষে কৃষকের মুখে হাসি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙামাটি জেলার দুর্গম নানিয়াচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নে গ্রাম বুয়ো আদামের বাসিন্দা রিপন চাকমা। সম্প্রতি তার করা ব্রোকলি ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি চারায় ফুটেছে ব্রোকলি। আকারে প্রতিটি ৫০০ গ্রাম থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। এরই মধ্যে ৩০/৪০ কেজি বিক্রিও হয়ে গেছে। এ বছর সব ব্রোকলি বিক্রি করে প্রায় ৪০/৪২ হাজার টাকা পাবেন বলেও আশাও করছেন রিপন। আর এতেই হাসি ফুটেছে তার মুখে। রিপন চাকমা বলেন, এ বছর তিনি ২০ শতক জমিতে ২০০০ ব্রোকলি চারা রোপন করেছেন। এ মধ্যে থেকে ১৫০০ চারায় ব্রোকলি ফুটেছে। ব্রোকলির ফলন ভালো হওয়ায় তার মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটেছে।

কিছুদিন আগেও কপি মানেই কৃষকরা বুঝতেন ফুলকপি বা বাঁধাকপি। কিন্তু এখন রাঙামাটিতে চাষ হচ্ছে বিলেতি সবুজ ফুলকপি বা ব্রোকলি। যা জেলার মানুষের কাছে একটি নতুন সবজি। গত বছরও রাঙামাটি জেলার বেশ কিছু উপজেলায় ব্রোকলির চাষ হলেও রিপনের এলাকায় এবারই প্রথম এই সবজি চাষ হয়েছে। তাই এলাকার চাষীরা এসে ব্রোকলি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন। পরামর্শ নিচ্ছেন রিপনের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, এনজিও জুম ফাউন্ডেশনের পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে তিনি এই ব্রোকলি চাষ করেছেন। এনজিওটি ভালো বীজ, জৈব সার দিয়েছে। তাছাড়া ব্রোকলির পাশাপাশি রিপন গাজরও চাষ করেছেন। আর এখান থেকেও ৫/৬ হাজার টাকা পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

রিপনকে ব্রোকলি চাষে সহায়তা করা এনজিও জুম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুজল কান্তি চাকমা জানান, রাঙামাটি জেলায় রিপনের মত আরো প্রায় ১৫০ জন কৃষক ব্রোকলি ও গাজর চাষ করছেন। আর এথেকে তারা প্রত্যকে বেশ লাভবানও হয়েছেন। সুজল বলেন, আমরা প্রত্যেক উপজেলায় পুষ্টিকর সবজি উৎপাদন করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর প্রশিক্ষণ শেষে তাদের পুষ্টিকর ও লাভজনক সবজির বীজ, জৈব সারও দেয়া হয়া হয়েছে। এছাড়াও এসব কৃষকদের সঙ্গে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সংযোগ স্থাপন করে দেয়া হয়। এতে করে তারা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিতে পারছেন বলেও জানান তিনি। সুজল কান্তি চাকমা বলেন, আমাদের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল পুষ্টিকর সবজি উৎপাদন করে স্থানীয়দের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের এসব সবজি চাষে উৎসাহিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।

এ বিষয়ে রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় ব্রোকলি বাইরে থেকে আনা হত রাঙামাটিতে। কিন্তু এখন এখানে উৎপাদিত ব্রোকলি স্থানীয়দের চাহিদা পুরণ করছে।

গত বছর জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে ব্রোকলি চাষ হয়েছে। এ সবজির চাষ প্রতি বছর বাড়ছে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। জেলার জুরাছড়ি, বরকল, নানিয়াচর, কাউখালী, রাজস্থলী, কাপ্তাই, বিলাইছড়ি, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাঙামাটি সদর উপজেলায় চাষ হয়েছে। দিনদিন এই লাভজনক সবজি সম্পর্কে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এর পাশাপাশি তারা গাজরসহ অন্যান্য পুষ্টিকর ও মুল্যবান সবজি চাষে কৃষকদের সহায়তা করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা একদিকে নিজেদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে অন্যদিকে এগুলো বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছেন।তাই সমতলের পাশাপাশি পাহাড়ের কৃষকদের কাছে দিনদিন ব্রোকলি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বর্তমানে সালাদে ও রান্নায় এখন অনেকেই ব্রোকলি খান। পুষ্টিবিদেরা বলছেন ব্রোকলিকে দারুণ পুষ্টিকর সবজি। আর এতে দুর্দান্ত কিছু উপকারী উপাদান আছে, যা দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে পারে। তাছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। যা ত্বকের জন্য ভালো এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।