মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী মিছিলে ফের সেনা-পুলিশের গুলিতে নিহত ১, সারাদেশে বিদ্যুৎ বন্ধ
![]()
নিউজ ডেস্ক
শুক্রবারও (৫ মার্চ) গণতন্ত্রপন্থীদের মিছিলে গুলি চালিয়েছে মিয়ানমার পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা বিক্ষোভ চলছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে। প্রথম দিকে শুধু মিছিলে বাধা ও হুঁশিয়ারিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন প্রতিদিনই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। এতে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫২ গণতন্ত্রপন্থী।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বেসামরিক মানুষদের এভাবে গুলি করে হত্যার নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার মিয়ানমারের প্রধান শহরগুলোতে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে পুনর্বহাল ও অং সান সুচিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দেলেতে। এতে হাজার হাজার মানুষ যোগ দিয়েছেন।
মিছিল থেকে বলা হয়েছে, ‘প্রস্থর যুগ শেষ হয়েছে। যতই ভয় দেখাও না কেনো, আমরা আর ভয় পাই না।’ এরপরই সেখানে গুলি চালায় পুলিশ। এতে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। একজনের গলায় গুলি লাগলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নিহত ব্যাক্তির বয়স ২৫ এর কাছাকাছি। এছাড়া, অন্যান্য শহরগুলোতেও রাবার বুলেট ছুঁড়েছে পুলিশ। সেখানে আন্দোলন করছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, মিয়ানমারে সারাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবারহ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, ‘ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় ঘটা’র কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খবর এএফপির। শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে লোকজন টুইটার ও ফেসবুকে পোস্ট দিতে থাকে যে বাণিজ্যিক কেন্দ্র ইয়াঙ্গুনের সব জায়গা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
ইয়াঙ্গুনের ইয়াঙ্কিন অঞ্চলে অবস্থিত ইয়াঙ্গুন বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ব্যবস্থাপনায় বিপর্যয় ঘটার কারণে দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে।’ ইরাবতি নদীর তীরবর্তী মাগওয়ের শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান থেকেও একই রকম বক্তব্য দেয়া হয়েছে। দেশের অন্যান্য প্রান্তেও বিদ্যুৎ না থাকার কথা ফেসবুকে জানাচ্ছেন অনেকে। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে সামরিক জান্তা সরকার মিয়ানমারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্লাটফর্মগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া রাতের বেলা ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে লোকজন ভিপিএন ডাউনলোড করে বিকল্প উপায়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পরপরই মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, শ্রমিক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের পেশাজীবীরা কাজে ইস্তফা দিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করেন। শান্তিপূর্ণ এই বিক্ষোভ অত্যন্ত সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা চালাচ্ছে সামরিক সরকার।