ভারতে একদিনে রেকর্ড ৪ লাখ শনাক্ত, হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডে ১৮ করোনা রোগীর মৃত্যু

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে চার লাখ এক হাজার ৯৯৩ জনের দেহে। এ সময়ে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৫২৩ জনের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে শনিবার এনডিটিভির প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড প্রকাশের দিনেই দেশটিতে শুরু হয়েছে তৃতীয় পর্যায়ের টিকাদান। যদিও ডোজের স্বল্পতার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজ্য। টানা ৯ দিন ধরে ভারতে ৩ লাখ করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শুক্রবার আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেশটিতে এক দিনে শনাক্ত চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। দ্বিতীয় ধাক্কায় বিপর্যস্ত ভারতে প্রায় তিন সপ্তাহ আগে দৈনিক শনাক্ত প্রথমবারের মতো এক লাখের ঘরে পৌঁছায়।

এমন বাস্তবতায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার সতর্ক করে বলেছে, করোনার ভয়াবহতা নিয়ে কোনো তথ্য শেয়ার করলে কিংবা নিজেদের দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থার কথা জানালে নাগরিকদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো যাবে না।

সর্বোচ্চ আদালত আরো বলেছে, শয্যা বা অক্সিজেনের আর্জি জানানো কোনো নাগরিককে হেনস্তা আদালত অবমাননা হিসেবে গণ্য হবে।

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় ভারতে টিকা স্বল্পতার মধ্যেই ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবার জন্য টিকাদান শুরু করেছে সরকার। কার্যক্রম শনিবার থেকে শুরু করলেও বেশিরভাগ রাজ্য বলছে, তারা সবার জন্য টিকা কর্মসূচি চালিয়ে নিতে পারবে না। কারণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত টিকা মজুত নেই।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার শুক্রবার জানিয়েছে, তাদের কাছে এক কোটি ডোজ টিকা এখনও মজুত আছে। তবে রাজ্যগুলো বলেছে, তাদের কাছে যে পরিমাণ টিকা আছে তা দিয়ে তৃতীয় ধাপের টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। দেশটির দিল্লি, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড ও পাঞ্জাব রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কাছে টিকার যথেষ্ট মজুত নেই।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩৩ কোটি মানুষের দেশটি এরই মধ্যে ১৫ কোটি মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে। সংখ্যার দিক থেকে এটিই বিশ্বে সর্বোচ্চ। ভারতে মূলত দুটি কোম্পানির তৈরি টিকা দেয়া হচ্ছে। এই দুই টিকার একটি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে অ্যাস্ট্রেজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড ও আরেকটি নিজেদের ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন।

জানুয়ারি থেকেই সবার জন্য টিকা কর্মসূচি শুরু করতে চেয়েছিল ভারত। কিন্তু পর্যাপ্ত টিকা মজুত না থাকায় সেটি করতে ব্যর্থ হয় সরকার। এরপর দেশটি ঘোষণা দেয়, তৃতীয় পর্যায়ে পয়লা মে থেকেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। ভারতের জনসংখ্যার একটা বড় অংশই ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী। টিকা স্বল্পতার মধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যে এক কোটি ৩০ লাখ লোক তৃতীয় ধাপে টিকা নেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তবে অনেক রাজ্য শনিবার থেকে সেই টিকা কর্মসূচি শুরু করতে পারছে না।

এদিকে, গুজরাটে এক হাসপাতালে আগুন লেগে করোনায় সংক্রমিত অন্তত ১৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে গুজরাটের ভরুচ এলাকার একটি হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি অবস্থায় আগুনে পুড়ে মারা যান এই রোগীরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, চারতলাবিশিষ্ট ওয়েলফেয়ার হাসপাতালে ৫০ জনের মতো রোগী ভর্তি ছিলেন। গতকাল দিবাগত রাত একটার দিকে হাসপাতালটির কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে আগুন লাগে। সে সময় রোগীদের উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দা ও অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা।

এক পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘আজ শনিবার সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত আমরা ১৮ জন রোগীকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তবে আগুন লাগার পরপরই ১২ জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। আগুন নিভে যাওয়ার পর বাকি ছয়জনের মৃত্যু সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হই।’

ভরুচ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রাজেন্দ্র সিনহা সুদাসামা বলেন, আগুন ও ধোঁয়ার কারণে রোগীরা মারা যান। এর মধ্যে ছয়জন কীভাবে মারা গেছেন, সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অগ্নিকাণ্ডের সময় ওই হাসপাতালেই, নাকি অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরের সময় তারা মারা গেছেন, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

বর্তমানে ওই হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বেশ কয়েকজন রোগীকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী আরেকটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।