দূর্গম পাহাড়ে পাহাড়ীদের করোনা টিকাদানে সেনাবাহিনীর সহায়তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
চলমান মহামারি করোনার গণটিকা কার্যক্রমকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনসাধারণের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকার দূর্গম পাহাড়ে সম্প্রতি করোনার গণ টিকাদান নিয়ে সংশয়ে পড়তে হয়েছিলো দেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে।
রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত বড়থলি ইউনিয়ন। ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে কিছুটা পথ যাওয়া সম্ভব হলেও বাকি পথ যেতে পায়ে হাঁটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে ফারুয়া ইউনিয়ন হয়ে হেঁটে সেখানে যেতে লাগে কমপক্ষে চারদিন। বান্দরবানের রুমা উপজেলার বগালেক থেকে এই ইউনিয়নে হেঁটে যেতে লাগে দুদিন।
দুর্গম হওয়ার কারণে ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কেউই যেতে চান না ওই ইউনিয়নে। সরকারি সব সুবিধাও সঠিক সময়ে পৌঁছাতে বেশ বেগ পেতে হয়। এ কারণে দেশের অন্য সব ইউনিয়নে গত ৭ আগস্ট গণটিকা কার্যক্রম শুরু হলেও এই ইউনিয়নে শুরু করা সম্ভব হয়নি।
তবে, সরকারের টিকাদানের মতো এই মহৎ উদ্দেশ্যকে গতিশীল রুপ দেয়া ও পাহাড়ের দূর্গম এলাকাগুলোতে বসবাসরত পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে সারাদেশের মতো করোনার টিকাদান কর্মসূচীর আওতায় আনতে এবার স্বাস্থ্য বিভাগের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
এরই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার (১০ আগষ্ট) রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের দুর্গম পল্লীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনায়, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের সাহায্যে গণটিকা কার্যক্রম সামগ্রী নিয়ে একটি মেডিকেল টিম পাঠানো হয়েছে। এই প্রথমবারের মতো ইউনিয়নটিতে কোনো সরকারি কর্মকর্তার পা পড়ল। সকাল ১০টার দিকে কাপ্তাই উপজেলার বিদ্যুৎ উৎপাদন এলাকার হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপ্টারের সাহায্যে সেখানে যান করোনার টিকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমার নেতৃত্বে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম উক্ত দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় করোনা গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ এর গণটিকা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ বড়থলি ইউনিয়নে বসবাসরত প্রায় ৭ শ’ পাহাড়ী জনগোষ্ঠির মাঝে করোনা টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রশ্মি চাকমা বলেন, ‘দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে ৬০০ জনকে এ টিকা দেয়া হবে। পাশাপাশি বিলাইছড়ি স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা এবং ইপিআই কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রয়োজনীয় সামগ্রীও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এর আগেও বড়থলি ইউনিয়নের মানুষের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে এবং ইউনিয়নের প্রকল্প পরিদর্শন করতে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও দুর্গম এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে যাওয়া হয়নি। রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের বিশেষ উদ্যোগে গণটিকাদান কার্যক্রম সফল করতে প্রথমবারের মতো এ ইউনিয়নে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।’
এ ধরনের দুর্গম এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় গণটিকা কার্যক্রম পরিচালনা করায় জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং গণটিকার সুবিধাভোগী ও আপামর সাধারণ জনগণ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
দেশ ও জনগণের প্রয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ ধরনের জনবান্ধব, সহায়তামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।