সিনহা হত্যা মামলায় দুই দিনে বাদীকে ১২ ঘণ্টা জেরা, ওসি প্রদীপের ফোনালাপের ঘটনায় ৪ পুলিশ প্রত্যাহার - Southeast Asia Journal

সিনহা হত্যা মামলায় দুই দিনে বাদীকে ১২ ঘণ্টা জেরা, ওসি প্রদীপের ফোনালাপের ঘটনায় ৪ পুলিশ প্রত্যাহার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সিনহা হত্যা মামলার আসামি লিয়াকতের পক্ষে জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হলো টানা ২ দিন বাদীর সাক্ষ্য ও জেরা। এ নিয়ে আসামিদের আইনজীবীরা বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসকে ১২ ঘণ্টা জেরা করেছেন।

প্রথম দিন বাদীসহ ৩ জন হাজিরা দিলেও বাদীর জেরা শেষ না হওয়ায় বাকীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার প্রথম দিনের অসমাপ্ত জেরা সকাল সোয়া ১০টা থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে শুরু হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলে।

শুরুতেই মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপের পক্ষে বাদীকে জেরা করেন আইনজীবীরা। জেরার সময় বাদীকে মামলার মেরিটের বাইরেও বেশ কিছু প্রশ্ন করে বিব্রত করার চেষ্টা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবীরা।

বাদীর জেরা শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় দিনের অন্য কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেননি আদালত। ফলে বুধবার বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণের প্রচেষ্টা চলবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম।

পিপি বলেন, ‌‘সোমবার (২৩ আগস্ট) মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস সিনহা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাক্ষী দেন। সেদিনই আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ৫ ঘণ্টা জেরা করেন। মঙ্গলবার সকাল থেকে অসমাপ্ত জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।’

মামলার বাদী ও নিহত সিনহা মো. রাশেদের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আদালতকে বলেন, ‘টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে খুন হন সিনহা মো. রাশেদ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ জেনে গত বছরের ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এ হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। তিনি অভিযুক্ত ১৫ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন আদালতের কাছে।’

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৫ আসামি।

এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মোবাইলে কথা বলেছেন টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক এসটিআইসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (২৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, এসটিআই শাহাব উদ্দিনসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ চলছে। আদালতে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।

ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়, আদালতের কাঠগড়ায় বসে মোবাইলে কথা বলছেন কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি ও আলোচিত সিনহা হত্যা মামলার দ্বিতীয় আসামি প্রদীপ কুমার দাশ। ছড়িয়ে পড়া ছবিটির বিষয়ে আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, মোবাইলে কথা বলার ছবিটি মঙ্গলবারের নয়। এদিন আসামি প্রদীপের গায়ে গেঞ্জির কালার ছিল রঙিন। ছবিটি সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিনের (সোমবারের) হতে পারে। এদিন তার গায়ের জামার কালার ছিল এটি। কে বা কারা এ ছবি তুলেছেন, তাও অজানা।

সোমবার (২৩ আগস্ট) কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সিনহা হত্যা মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ চলছিল। এ সময় কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামি। প্রদীপের পরনে ছিল কালো রংয়ের জামা। ছড়িয়ে পড়া ছবির ব্যক্তিকে কালো রংয়ের জামা পরে থাকতে দেখা যায়। মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিন প্রদীপ আদালতে আসেন লাল রংয়ের জামা পরে।

প্রথমদিন সাক্ষ্য গ্রহণের কোনো এক ফাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় বসে প্রদীপ মোবাইলে কথা বলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যায়, আদালত কক্ষের কাঠগড়ার ভেতরে হাঁটু গেড়ে বসে আছেন প্রদীপ। হাতে থাকা মোবাইলে কারও সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন। তার মাথায় চুল নেই। ফলে ছবিটি যে প্রদীপের, তা স্পষ্টভাবে শনাক্ত করা যায়। ঘটনার সময় কয়েকজন ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ওসি প্রদীপ মোবাইলে লম্বা সময় কথা বলেন। সম্ভবত তিনি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কথা বলার জন্য মোবাইলটি ওসি প্রদীপকে সরবরাহ করেন দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য।

এর আগে সকাল সোয়া নয়টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা হয় সিনহা হত্যা মামলার ১৫ আসামিকে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর মেরিন ড্রাইভ সড়কের এপিবিএন’র চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর অব. সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ঐ বছরের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।