মিয়ানমারে শান্তি ফেরেনি, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল - Southeast Asia Journal

মিয়ানমারে শান্তি ফেরেনি, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রয়টার্স অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে মিয়ানমার জুড়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা। আন্দোলন, ধর্মঘট এবং জান্তা বিরোধী বিক্ষোভে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটির জনজীবন।

সম্প্রতি সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী মিলিশিয়া বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারীদের দমন-পীড়ন এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার মতে, মিয়ানমারের সার্বিক পরিস্থিতি দেশটিকে বর্তমানে এক জীবন্ত নরকে পরিণত করেছে।

গত মাসে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে লড়াই চলাকালীন বিধ্বস্ত হয় ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা শিন রাজ্যের থান্তলাং শহরের বেশির ভাগ বাড়িঘর। এ অবস্থায় শহরটির অন্তত ১০ হাজার অধিবাসীর অধিকাংশই পালিয়ে আশ্রয় নেন মিজোরামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। তবে সবকিছু ছাপিয়ে ওই সময় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে সংঘর্ষ চলাকালীন সেনা সদস্যদের হাতে কুং বিয়াক হাম নামে থান্তলাং শহরের এক খ্রিষ্টান ধর্মযাজকের নিহত হওয়ার ঘটনা। শুধু গুলি করে হত্যার পর ওই ধর্মযাজকের আঙুল কেটে তাঁর বিয়ের আংটিও চুরি করে নিয়ে যায় সেনারা।

শিনের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার উপপরিচালক সালাই জা উক লিং আল-জাজিরাকে বলেন, ‘কুং বিয়াক হামকে হত্যা এবং তাঁর আঙুল কেটে ফেলা মিয়ানমারের জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর বর্বরতারই চিত্র।’

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর থেকে যতগুলো হামলা বা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে থান্তলাংয়ের ঘটনা অন্যতম। এর মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন দেশটির বিক্ষোভ-প্রতিবাদকারী এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মানুষেরা।

বিক্ষোভে বিপর্যস্ত জনজীবন। ছবি: রয়টার্সপ্রাণ হারানোর শঙ্কায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে কায়াহ রাজ্যের একটি ক্যাথলিক গির্জার নেতা আল জাজিরাকে বলেছেন, ‘গির্জাগুলো এখন ফাঁকা এবং জনশূন্য। মানুষের মনে ভীতি সঞ্চারিত হয়েছে। এমনকি গির্জাগুলোও এখন হামলা থেকে নিরাপদ নয়।’

এ বিষয়ে জানতে দেশটির সামরিক মুখপাত্র মেজর জেনারেল জাও মিন তুনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি, তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।

সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, গত মে মাসে সামরিক বাহিনী কায়ার বিভিন্ন গির্জায় হামলা চালায়, যার মধ্যে একটি ক্যাথলিক গির্জাও ছিল। সে সময় গুলি করে চারজনকে হত্যা করে সেনা সদস্যরা। যদিও তাদের দাবি, ওই গির্জায় ‘স্থানীয় বিদ্রোহীরা’ লুকিয়ে ছিল।

বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় যুগ যুগ ধরে ধরেই মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন অন্যান্য ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠীর মানুষেরা।

সু চির বিষয়ে জান্তা সরকার
মিয়ানমার জান্তা সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন জানিয়েছেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানের দূত দেশটি সফরে যেতে পারবেন। তবে অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি কারাবন্দী অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। একই সঙ্গে জাতিসংঘসহ অন্য দেশগুলোকে দ্বৈতনীতি এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত এপ্রিলে আসিয়ানের সঙ্গে পাঁচ দফা শান্তি পরিকল্পনায় সম্মত হয় মিয়ানমারের জান্তা সরকার। চুক্তি অনুযায়ী, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকায় গত বুধবার এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছেন জান্তা সরকারের মুখপাত্র।