বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সীমান্তে আঞ্চলিক দুই সশস্ত্র গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৩ - Southeast Asia Journal

বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সীমান্তে আঞ্চলিক দুই সশস্ত্র গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ৩

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

দুই পাহাড়ী জেলা বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি সীমান্তের নতুনপাড়া এলাকায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও মগ লিবারেশন পার্টির সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে এক পথচারীসহ তিনজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকালে রাঙ্গামাটির রাজস্থলী সীমান্তের গাইন্দা ইউনিয়নের কেচি নতুন পাড়ার কাছে এ ঘটনা ঘটে।

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অং থোয়াই মারমা (৪৫) নামের একজনের নাম জানা গেলেও অন্য দুইজনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। অং থোয়াই মারমা জামছড়ির থাংকুই পাড়ার থুই খয় মিঙ মার্মার ছেলে। নিহত অং থোয়াই মারমা নিজের প্রাণ রক্ষার জন্য সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের পথ দেখাতে গিয়ে অপর শসস্ত্র গ্রুপের গুলিতে প্রাণ হারান বলে জানা গেছে। এসময় ঘটনাস্থলে একে ৪৭ রাইফেল, পিস্তল ও সামরিক পোষাক পরিহিত দুইজনসহ তিনজনের লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এই ব্যাপারে বান্দরবানের রাজবিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ক্যাং প্রু মার্মা বলেন, নিহতদের মধ্যে অং থোয়াই রাজবিলার বাসিন্দা, তাকে পথ দেখতে জোর করে নিয়ে গিয়েছিল, আর ঘটনায় সেও প্রাণ হারায়।

এ ঘটনার পর খবর পেয়ে সেখানে বান্দরবান থেকে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল পৌঁছেছে। আশেপাশের পাড়াগুলোর লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। মূলত সম্প্রতি বেশকিছুদিন ধরেই পাহাড়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সকালের ঘটনার পর স্থানটিতে অনেক গোলাবারুদ দেখতে পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের দিকে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জনসংহতি সমিতি ও মগ লিবারেশন পার্টির মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে যারা নিহত হয়েছেন, তারা কোন দলের তা এখনও জানা যায়নি। রাঙ্গামাটির গাইন্দ্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পু চি মং মারমা বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। পরে জানলাম চারজন প্রাণ হারিয়েছেন, কিন্তু মরদেহ দেখিনি। তাই বিষয়টি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ সকালে মগ লিবারেশন পার্টির দশ-বারোজনের একটি দল বান্দরবান থেকে রাজস্থলীর দিকে যাচ্ছিল। এ খবর পেয়ে জেএসএস (সন্তু) দলের অন্তত ৫০ জনের একটি দল তাদের ওপর গোলাবারুদসহ অতর্কিতে আক্রমণ করে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে অনুমান করছেন স্থানীয় ওই জনপ্রতিনিধি।

রাজস্থলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফজল ইসলাম খান বলেন, ‘গোলাগুলির ঘটনাটি শুনেছি। তবে রাজস্থলীতে কি না জানি না। ঘটনাটি নতুন কেচিং পাড়াতে হয়েছে বলে শুনেছি।’

প্রাণহানির বিষয়টি এর আগে নিশ্চিত করেন রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তনু কুমার দাশ। তিনি জানান, গোলাগুলিতে প্রাণহানি হয়েছে তা সত্য। তবে কতজন মারা গেছেন কিংবা ঘটনাটি কোথায় তা সঠিক বলা যাচ্ছে না। সীমান্তবর্তী হওয়াতে ঘটনাস্থলে না গেলে বোঝা যাবে না।

এদিকে বান্দরবানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল বলেন, ঘটনাস্থলটি রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার গাইন্দা ইউনিয়নে পড়েছে। তবে এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন জানান, হতাহতের খবর পেয়েছি। পু‌লিশ ও সেনা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে দি‌কে রওনা দিয়েছে, বিস্তারিত প‌রে জানা যাবে। তিনি বলেন, ‘তিনজন মারা গেছেন। তিনটি জায়গার কথা উঠে এসেছে। বান্দরবানের রাজবিলা, রাঙ্গামাটির রাজস্থলীর নোয়াপাড়া ও রাজস্থলীর গাইন্দ্যা এলাকা। সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেছে। আমরা বিস্তারিত পরে জানাতে পারব।’

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি নিয়ে মগ লিবারেশন পার্টি ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে সংঘাত চলে আসছে। গত এক বছরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে।