চুক্তিতেই আটকে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি – একজন পাঠকের অভিমত
 
                 
এমদাদ হোসেনঃ
আজকের প্রথম আলো পত্রিকা পড়লাম। পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় “চুক্তিতেই আটকে আছে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি” শিরোনামে এক লেখনীতে জনাব দেবাশীষ রায় অভিমত দিয়ে বলেছেন- “সমস্যা সমাধানে চাই সহানুভূতি”। তিনি আরো বলেছেন- “মনের সংকীর্ণতা, পাহাড়ের প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ইতিহাস না জানা বা জেনেও তাকে অবজ্ঞা করার চেষ্টার জন্যই আজকের সমস্যা চলছে”।

জনাব দেবাশীষ রায়ের এই অভিমত নিয়ে আমার দুটো কথা ছিলো। একটু ধৈর্য্য নিয়ে পড়বেন আশা করি।
জনাব দেবাশীষ রায় হলেন রাংগামাটি পার্বত্য জেলার বাসিন্দা যিনি পেশায় একজন ব্যারিস্টার এবং বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফ। জনাব দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায় ছিলেন একজন খাস রাজাকার। বাংলাদেশের ইতিহাসে ত্রিদিব রায়ই একমাত্র রাজাকার যে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও পাকিস্তান সরকারের তাঁবেদারি করে গেছে। ত্রিদিব রায় আমৃত্যু পাকিস্তান মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ছিলো। জনাব দেবাশীষ রায়ের পিতা পাকিপ্রেমিক ত্রিদিব রায়ের লাশ পাকিস্তানেই সমাহিত আছে। এইরকম একজন রাজাকারের পুত্রের অভিমত বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি জাতীয় দৈনিক বেশ ফলাও করে ছাপিয়েছে। এ থেকে আমার অভিমত হলো—
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ থাকা স্বত্ত্বেও দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা একজন চিহ্নিত রাজাকার পুত্রের মতামত কেন নিলো? তাহলে কি প্রথম আলো পত্রিকাও স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী?
২। আবার ভিন্নভাবেও এটা ভাবা যেতে পারে। যেমন, জনাব দেবাশীষ রায় সহানুভূতির কথা বলেছেন। আমি বলি—হ্যাঁ, আমাদের সহানুভূতি আছে বলেই একজন খাস রাজাকার পুত্র জনাব দেবাশীষ রায় এখনো এই দেশে বেশ সন্মানের সাথে বসবাস করতে পারছে, এখনো মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাচ্ছে।
তবে জনাব দেবাশীষ রায় শুধু রাজাকার পুত্র হলেও একটা কথা ছিলো। আমরা বলতাম যে উনার বাবা রাজাকার ছিলেন সেই দায়ভার উনার নয়। কিন্তু, ১৯৭১ সালে ত্রিদিব রায় যেভাবে বাংলাদেশের সাথে গাদ্দারী করেছিলো ঠিক তেমনি ভাবে বর্তমান সময়ে তার পুত্র জনাব দেবাশীষ রায় বাংলাদেশের সাথে গাদ্দারী করে যাচ্ছে। কি পাঠক খটকা লাগছে? আমি অতি সংক্ষেপে জনাব দেবাশীষ রায়ের দেশবিরোধী কিছু কর্মকান্ড তুলে ধরছিঃ
১। ১৯৭১ এ ত্রিদিব রায় বাংলাদেশের বিরোধীতা করে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিলো আর বর্তমানে সেই রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র জনাব দেবাশীষ রায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র “জুম্মল্যন্ড” গঠনের পাঁয়তারা করছে। আর সে লক্ষ্যে দেবাশীষ রায় গোপনে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এই নব্য রাজাকার দেশে-বিদেশে বিভিন্ন উগ্রপন্থী সংগঠনসহ নানান সংস্থার সাথে এ ব্যাপারে লবিং করছে। পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে মদন ও ইন্ধন দিচ্ছে। তাদের জন্য ব্যাপক অস্ত্র ক্রয় করছে। পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসীদের কাছে মায়ানমার থেকে সব অস্ত্রের চালান আসতো আরাকান আর্মির নেতা ডা. রেনিন সোয়ের মাধ্যমে। সেই রোনিন সোয়ের সাথে দেবাশীষ রায়ের গোপন বৈঠকের কথা কারোরই অজানা নয়।
২। স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের হাতিয়ার হিসেবে সম্প্রতি উপজাতিরা নিজেদেরকে আদিবাসী দাবী করা শুরু করেছে। কারণ আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের কোন কর্তৃত্ত্ব থাকবে না। উপজাতিদের এই আদিবাসী দাবী করার পিছনের মূল কারিগর ঐ দেবাশীষ রায়। তবে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থানের ফলে আদিবাসী ইস্যু কিছুটা স্তিমিত হলেও দেবাশীষ রায় বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের হাত করে এ ব্যাপারে তাদের অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। যেমন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা উপজাতিদেরকে সবসময় “আদিবাসী” আখ্যা দিয়ে সংবাদ ছাপে। যা বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩.ক অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। সেই সাথে আন্তর্জাতিক মহলেও জোর অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে এই দেবাশীষ রায়। অথচ, ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকালে এই দেবাশিষ রায় রাষ্ট্রীয়ভাবে অফিসিয়ালি লিখেছিলেন যে, “বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নাই। কিছু জনগোষ্ঠী আছে”। এমনকি গত ১ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত কোটা সংরক্ষণ সংক্রান্ত এক চিঠিতে উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ আখ্যার পরিবর্তে ‘পাহাড়ী’ ও ‘স্বল্প সংখ্যার জাতিসত্ত্বা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন দেবাশিষ রায়। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু দেশের উপজাতিদেরকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি তাই চতুর দেবাশীষ রায় তার কোটার দাবি সংক্রান্ত চিঠিতে ‘আদিবাসী’ শব্দটি সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন শুধুমাত্র সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে। হায়রে স্বার্থপর, লোভী, বিবেক বর্জিত, দ্বিমূখী চরিত্র রাজাকার পুত্র!
৩। পর্দার অন্তরালে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করতে জনাব দেবাশীষ রায় সর্বদাই সচেষ্ট থাকেন। গত বছরের (২০১৮) মার্চ মাসে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী সেমিনার আয়োজন করেছিলেন এই ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। (দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ মার্চ, ২০১৮).
জনাব দেবাশীষ রায়ের এমন দেশবিরোধী কর্মকান্ড আরো অনেক আছে। জনাব দেবাশীষ রায় উনার অভিমতে পাহাড়ের রাজনৈতিক ইতিহাসের কথা বলেছেন। তাই আমি সামান্য ইতিহাস তুলে ধরলাম। বুদ্ধিমান পাঠকেরা এ থেকে বুঝে নিয়েন পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুতে দেবাশীষ রায়ের স্বার্থ কি। দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা সব জেনেশুনেও কেন একজন রাজাকার পুত্র এবং দেশদ্রোহীর বক্তব্য ফলাও করে ছাপিয়েছে সেটাও নিশ্চয় অনুমান করতে পারছেন।
জনাব দেবাশীষ রায় আপনাকে বলছি—
> আপনার মুখে শান্তির কথা মানায় না। কারন পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্তির দিকে ঠেলে দেয়ার মূল কারিগর আপনি।
> আপনি লিখেছেন “সমস্যা সমাধানে চাই সহানুভূতি” অথচ সেই আপনিই বলছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাংগালীদের অপসারন করতে। ভূমিহীন, নদী ভাংগনের শিকার, অসহায় ঐসব বাংগালি জনগোষ্ঠীর প্রতি আপনি তাহলে কি সহানুভূতি দেখালেন? আপনি একজন খাস রাজাকারের ছেলে এবং বর্তমানে দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন এটা জানার পরও তো রাষ্ট্র আপনার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতি দেখাচ্ছে। আপনি মনের সংকীর্ণতার কথা বলেছেন। একবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন—সংকীর্ণমনা কে?
প্রথম আলো পত্রিকাকে বলছি—
> এই সব রাজাকার ও দেশদ্রোহীদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা করে নিজেদের গায়েও “রাজাকার” তকমা লাগাইয়েন না।
> সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে নিজেকে বিক্রি করে দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলী দিয়েন না।
> প্রথম আলো আমার প্রিয় পত্রিকা। আমি চাইনা এই পত্রিকাকে ভবিষ্যতে কেউ গালি দিয়ে বলুক – “দৈনিক প্রথম গোলাম আযম”, “দৈনিক প্রথম নিযামী”, “দৈনিক প্রথম ত্রিদিব রায়”………
নোটঃ বর্ণিত অভিমতটি জনাব এমদাদ হোসেনের একান্ত নিজস্ব। সাউথইষ্ট জার্নাল কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন সম্পৃক্ততা নেই।
