স্ত্রীর জবানবন্দীঃ প্রেমিকের সহযোগিতায় স্বামীকে হত্যা!
![]()
নিউজ ডেস্ক:
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার উত্তর চেঙ্গুছড়া গ্রামে গত ২০মে দিবাগত রাতে প্রেমিক নূর হোসেন নূরু’র সহযোগিতায় স্বামী মো. রফিকুল ইসলামকে হত্যা করেছে স্ত্রী রোকসানা আক্তার!
বুধবার দুপুরে খাগড়াছড়ি ম্যাজিট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বামী হত্যার এমন লোমহর্ষক জবানবন্দী দিয়েছেন নিহতের সহধর্মীনি রোকসানা!
পুলিশ এবং আদালত সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তিনটহরী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড চেঙ্গছড়া গ্রামের মো. ওহাব মিয়া সওদাগর এর ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৩৭) ২০০২ সালে সামাজিকভাবে বিয়ে করেন একই গ্রামের কিশোরীকে রোকসানা আক্তার(৩০)কে। তাদের সংসারে ২ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। সংসারে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে রফিক চট্টগ্রামে হোটেল বয়ের কাজ করতেন। আর স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে বাড়িতে থাকতেন। স্বামী রফিক মাসে-দু’মাসে ২/৪ দিনের ছুটিতে বাড়ী আসতেন এবং নিয়মিত পারিবারিক ভরণ-পোষণ চালাতেন। এভাবে মোটামুটি সুখে-শান্তিতেই চলছিল রফিক-রোকসানার জীবন। গত ১ বছর পূর্বে একই গ্রামের লম্পট যুবক ২ সন্তানের জনক নূর হোসেন ওরপে নূরু’র সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে রোকসানা! এক পর্যায়ে স্বামীকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করে রোকসানা ও নূরু।
পরিকল্পনা অনুযায়ী রোকসানার স্বামী মো. রফিকুল ইসলাম রমজানের বন্ধে বাড়িতে আসলে ঘটনার দিন ২০ মে রাত ১১টার পর রোকসানা ও রফিক ঘুমাতে যায় এবং এক পর্যায়ে স্বামী রফিক ও রোকসানা গোসল শেষে বাতি নিভিয়ে ঘুমাতে গলে রফিক ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু রোকসানা জেগে থাকে এবং পূর্বপরিকল্পিত পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিককে মেরে ফেলার জন্য প্রেমিক নূর হোসেন নূরু’র জন্য অপেক্ষা করেন। যথাসময়ে নূরু এসে উপস্থিত হয়। পরে প্রেমিক-প্রেমিকা(নুরু-রোকসানা) মিলে প্রথমে রফিককে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা নিশ্চিত করেন! এরপর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দা দিয়ে রফিকের মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করেন এবং এক পর্যায়ে প্রেমিক নূরুকে সরিয়ে দিয়ে রোকসানা চিৎকার(কান্নাকাটি) করলে প্রতিবেশিরা টের পায় এবং রফিক খুন হয়েছে মর্মে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে যায় এবং ঘটনার প্রাথমিক বর্ণনা শুনে নিহতের স্ত্রী রোকসানাকে সন্দেহ করে লাশের সাথে থানায় নিয়ে আসে। পরে নিহতের পিতা মো. ওহাব মিয়া সওদাগর পুত্র হত্যার বিচার দাবী করে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ রোকসানাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপকটে রোকসানা পরকীয়া ও হত্যার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে। পরে ২২ মে পুলিশ নিহতের স্ত্রী রোকসানাকে খাগড়াছড়ি ম্যাজিট্রেট আদালতে হাজির করলে বিজ্ঞ বিচারকের সামনে ১৬৪ ধারায় স্বামী হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় ঘাতক রোকসাসা আক্তার!
পুলিশ এ হত্যাকান্ডটিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করায় হত্যাকান্ডের ক্লু দ্রুত সময়ে বের করা গেলেও প্রেমিক নুর হোসেন নুরু এখনো পলাতক!
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই মো.আবদুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ঘটনার পর পর অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদসহ সঙ্গীয় ফোর্সরা ঘটনাটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবাল করায় অল্প সময়ে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার নির্ঝন জনপদে গিয়ে নিহতের লাশ ও সন্দেভাজন রোকসানাকে থানায় নিয়ে আসায় পরবর্তী কার্যক্রমে সফলতা এসেছে। এখন ঘটনার অপর ঘাতক নুর হোসেন নুরু’কে ধরার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে অপরাধীকে ধরতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।