কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর উগ্রপন্থীদের খোঁজে তল্লাশি - Southeast Asia Journal

কাশ্মীরে ৫ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর উগ্রপন্থীদের খোঁজে তল্লাশি

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারত শাসিত কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর একটি গাড়িতে হামলা চালিয়ে পাঁচ সেনাসদস্যকে হত্যার পরে সেখানে শুক্রবার সকাল থেকে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ওই গ্রেনেড হামলায় নিহত সেনাসদস্যদের নামও প্রকাশ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী।

বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুঞ্চে ওই হামলা হয়। নিহতদের মধ্যে চারজনই পাঞ্জাবের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে সেনা কর্মকর্তারা। হামলায় আরও এক সেনাসদস্য গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এরা সবাই ভারত শাসিত কাশ্মীরে মোতায়েন হওয়া সেনাবাহিনীর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সদস্য ছিলেন।

সংবাদ সংস্থা এএনআই সেনা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরে দুটি দলে ভাগ হয়ে ছয়-সাত উগ্রপন্থী ঘুরছে বলে গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানা গেছে। উগ্রপন্থীদের দল দুটির খোঁজে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা একযোগে নেমেছেন। অভিযানে ড্রোন এবং হেলিকপ্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে বলে এএনআইকে জানিয়েছেন সেনাকর্মকর্তারা।

তল্লাশি অভিযানের সঙ্গেই ভারতের সন্ত্রাস দমন এজেন্সি এনআইএ-র একটি দলও শুক্রবার পুঞ্চের ঘটনাস্থলে যাবে।

ওই দলে ডিআইজি এবং এসপি পদমর্যাদার অফিসারেরা যেমন থাকবেন, তেমনই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এএনআই।

যেভাবে হামলা হয় সেনার ওপরে
সেনাবাহিনী বলছে বৃহস্পতিবার বিকেলে এক উগ্রপন্থী দমন অভিযানে বেরিয়েছিল রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের দলটি।

পুঞ্চ-রাজৌরি সেক্টরের ভিম্বার গলি থেকে সাঙ্গিয়োতের দিকে যাওয়ার সময়েই তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। সেই সময়ে বৃষ্টির কারণে দৃশ্যমানতাও খুব কমে গিয়েছিল। হামলার পরেই সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন লেগে যায়।

বাহিনীর সন্দেহ উগ্রপন্থীরা লস্কর-এ-তৈবার সদস্য এবং তারা পাকিস্তান থেকে এসেছিল, কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের সরকারী টুইটার হ্যান্ডেলে নিহত সেনা সদস্যদের নাম প্রকাশ করেছে শুক্রবার।

এরা হলেন হাবিলদার মনদীপ সিং, ল্যান্স নায়েক দেবাশীষ বসওয়াল, ল্যান্স নায়েক কুলওয়ান্ত সিং, সেপাই হরকিষেণ সিং এবং সেপাই সেবক সিং।

সেনা প্রধান জেনারেল মনোজ পাণ্ডে নিহত সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন।

নিহত সেনাসদস্যদের মধ্যে ৪ জনই পাঞ্জাবের বাসিন্দা
নিহত হাবিলদার মনদীপ সিং পাঞ্জাবের লুধিয়ানা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তার গ্রামের নাম চানকোইয়া কালান।

ল্যান্স নায়েক কুলওয়ান্ত সিংয়ের বাড়ি পাঞ্জাবেরই মোগা জেলার চরিক গ্রামে। সেপাই সেবক সিং ভাটিন্ডার বাসিন্দা ছিলেন।

ল্যান্স নায়েক দেবাশীষ বসওয়ালের বাড়ি উড়িষ্যার পুরী জেলায়।

সেপাই হরকিষেণ সিং পাঞ্জাবের গুরদাসপুর জেলার তালওয়ান্ডি ভরত গ্রামের মানুষ।

বিবিসি পাঞ্জাবী বিভাগের সংবাদদাতা গুরপ্রীত সিং চাওয়লা জানাচ্ছেন, ২৭ বছর বয়সী হরকিষেণ সিং রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ৪৯ নম্বর ব্যাটালিয়নের কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

তার বাবা মঙ্গল সিংও ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য।

তালওয়ান্ডি ভরত গ্রামে মি. সিংয়ের মৃত্যুর খবর পৌঁছতেই শোকের ছায়া নেমে আসে।

তার স্ত্রী দলজিত কৌর এবং দুবছরে কন্যা রয়েছে। মিসেস কৌর গর্ভবতী।

দলজিত কৌরের কথায়, “কয়েকদিন আগেই ও ভিডিও কলে পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলেছে। মেয়ে খুশপ্রীতের সঙ্গে তো অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল।“

ছুটির শেষে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি কাজে ফিরে গিয়েছিলেন।

হরকিষেণ সিংয়ের গ্রামের মতো একই অবস্থা কুলওয়ান্ত সিংয়ের গ্রামেও। তার বাবাও সেনাবাহিনীতেই ছিলেন।

 

কুলওয়ান্ত সিংয়ের বাবা মারা যান কার্গিল যুদ্ধে
কুলওয়ান্ত সিংয়ের এক আত্মীয় মন্দির সিং বিবিসির পাঞ্জাবী বিভাগের সংবাদদাতা সুরিন্দর মানকে জানিয়েছেন কুলওয়ান্তের বাবা বলদেও সিং কার্গিল যুদ্ধে মারা গেছেন।

কুলওয়ান্ত সিং ১৪ বছর ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। মাসদুয়েক আগেই তিনি পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গ্রামে এসেছিলেন।

বৃহস্পতিবারের উগ্রপন্থী হামলায় লুধিয়ানার বাসিন্দা ৩৯ বছর বয়সী হাবিলদার মনদীপ সিংও মারা গেছেন।

সেনাবাহিনীর তরফে ফোন করে পরিবারের কাছে মৃত্যু সংবাদ দেওয়া হয়েছে।

মনদীপ সিংয়ের পরিবারে রয়েছেন তার মা, স্ত্রী এবং শিশু কন্যা।

সেপাই সেবক সিংয়ের পরিবারে তিনিই ছিলেন একমাত্র পুত্র। তার বাবা, মা আর দুই বোন রয়েছেন।

সেবক সিং ২০১৮ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং মাত্র কুড়ি দিন আগেই ছুটি শেষ করে কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিলেন।

বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেনা ইউনিট ‘রাষ্ট্রীয় রাইফেলস’
রাষ্ট্রীয় রাইফেলস ভারতীয় সেনাবাহিনীরই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউনিট, যারা মূলত উগ্রপন্থী কার্যকলাপ রুখতেই কাজ করে।

ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরে ১৯৯০ সালে এই বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়।

রাষ্ট্রীয় রাইফেলস বিভিন্ন সময়ে উগ্রপন্থীদের গ্রেপ্তার, অস্ত্র ও গোলা বারুদ উদ্ধার, সন্দেহভাজনদের আটকের মতো কাজ করে থাকে।

আবার তাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে নানা সময়ে, যেগুলো বাহিনীর তরফে অস্বীকার করা হয়েছে।