মণিপুরে সহিংসতায়, জঙ্গি সংগঠন কেএনওর দায় অস্বীকার - Southeast Asia Journal

মণিপুরে সহিংসতায়, জঙ্গি সংগঠন কেএনওর দায় অস্বীকার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মণিপুরে সাম্প্রতিক সহিংসতায় রাজ্যের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো মদত দিচ্ছে—মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে কেএনও (কুকি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন)। সংগঠনটি মণিপুরে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং জঙ্গি গোষ্ঠীর সমন্বয়ক। তাদের দাবি রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী সাম্প্রতিক সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত নয়। রোববার রাতে সংগঠনটি এ কথা জানায়।

এর আগে রোববার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় মদত দিচ্ছে রাজ্যের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো। এ কারণে নিরাপত্তা বাহিনী জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপরে হামলা চালিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় অন্তত ৩৩ জনকে হত্যা করেছে। এই বক্তব্যেরই বিরোধিতা করেছে কেএনও। তাদের মতে, জঙ্গি মারা যায়নি।

কেএনওর মুখপাত্র শৈলেন হাওকিপ উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সরকারের সঙ্গে ‘সাসপেনশন অব অপারেশন’ (অস্ত্র বিরতি) চুক্তির আওতায় রয়েছে।

শৈলেন হাওকিপ বলেন, ‘জঙ্গিরা শিবিরে রয়েছে। এই শিবিরগুলো (ভারতের) নিরাপত্তা বাহিনী মাঝেমধ্যেই পরিদর্শন করে। জঙ্গিরা সেখান থেকে বের হয়নি। কিন্তু হঠাৎ এখন বলা হচ্ছে যে, অস্ত্র বিরতির আওতায় থাকা জঙ্গিরা সহিংসতায় অংশ নিয়েছে। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। গত ২৪ ঘন্টায় আমরা তিনজনের মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি। তবে তাঁরা চুক্তির অধীনে থাকা জঙ্গি নন।’

কেএনও মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেন যে, গোড়া থেকেই তারা বলে আসছেন, মণিপুরে ‘এথনিক ক্লিনজিং’ (জাতিগত নিধন) চলছে। তিনি বলেন, ‘উপজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে কুকিদের চিহ্নিত করে পরিকল্পনামাফিক নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এই কাজ মনণিপুর পুলিশের কমান্ডো বাহিনী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে করেছে। সমতলের (যেখানে মেইতেইরা রয়েছেন) বাইরে পাহাড়ে ওঠার আগে এবং পাহাড় অঞ্চলে আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং হত্যা করা হয়েছে। কুকি জঙ্গিরা যদি তাদের অস্ত্র নিয়ে এই আক্রমণের মোকাবেলা করত তাহলে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়ত। কিন্তু তা না বাড়াই প্রমাণ করে যে জঙ্গিরা এই অভিযানের অংশ নয়।’

কেএনও বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একটি শান্তি আলোচনার মধ্যে রয়েছে। সেই শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ায় তারা অস্ত্রবিরোধী চুক্তি করেছে। এই অস্ত্র বিরতি চুক্তি ২০০৮ সালে কুকি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সই করেছিল কেন্দ্র সরকার। যদিও সেই চুক্তি খারিজ হয়ে গিয়েছে বলে মণিপুর সরকারের পক্ষে সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে গত মার্চ মাসে জানানো হয়েছিল। রাজ্য সরকার এবং কেএনওর বক্তব্যের পরে সেই চুক্তি আছে না নেই তা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

সুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং রোববার সাংবাদিকদের বলেন, মণিপুরে শান্তি ফেরাতে গত এক দিনে অন্তত ৩৩ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। তাঁর এই ঘোষণার অর্থ মণিপুরে সহিংসতায় এক মাসেরও কম সময়, এক শরও বেশি মানুষের মৃত্যু হল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৭৫ জন আগেই মারা গিয়েছিলেন।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতির মর্যাদা দেওয়ার জন্য মণিপুর হাইকোর্টের সুপারিশকে কেন্দ্র করে গত ৩মে থেকে ধারাবাহিকভাবে সহিংসতা চলছে মণিপুরে। নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। ঘর-বাড়ি হারিয়ে ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মণিপুরের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও।

এ অবস্থায় সোমবার তিনদিনের সফরে মণিপুর যাচ্ছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর সফরের আগের দিন এত বড় সংখ্যায় সন্ত্রাসী হত্যার খবরে মণিপুরে সহিংসতা আশঙ্কা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত থেকে মণিপুরের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান চলছে। রাজ্যের কাকচিং জেলার সুগোনু, চুড়া চাঁদপুর জেলার কানকভি, পশ্চিম ইম্ফলের কাংচাপ, পূর্ব ইম্ফলের সাগলমাংসহ বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। পশ্চিম ইম্ফলে হামলার মুখে পড়েছেন বিজেপিদলীয় বিধায়ক কে রঘুমনি সিং।