রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ চান সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা - Southeast Asia Journal

রাখাইনে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ চান সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখই এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের তিন মাসে। আগামীকাল শুক্রবার রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর ও রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসকে ঘিরে আশ্রয়শিবিরগুলোতে চলছে নানা প্রস্তুতি। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার হিসাবও মিলিয়ে নিচ্ছেন অনেকে।

বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ঘুরে কথা হলো কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে। টেকনাফের শালবন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা মোমেনা খাতুন (৪৫) বলেন, শুরুতে জনপ্রতি ১২ মার্কিন ডলারের খাদ্যসহায়তা পেতেন রোহিঙ্গারা। এখন কমিয়ে আট ডলারে ঠেকেছে। সাহায্য আরও কমতে পারে।

উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি আশ্রয়শিবির ঘুরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আগামীকাল ২৫ আগস্টের গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তুতি চোখে পড়ে। তবে বড় জমায়েত ঘটানো নিয়ে সংশয় আছে রোহিঙ্গা নেতাদের মধ্যে।

উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা কামাল হোসেন বলেন, ৩৩টি আশ্রয়শিবিরের সব কটিতে ছোট–বড় করে গণহত্যা দিবসের সমাবেশ, শোভাযাত্রা, মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। আশ্রয়শিবিরে প্রায় ছয় লাখ কিশোর-তরুণ-যুবক তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন। প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় তাদের একটি অংশ মাদক-সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়েছে।

গত ছয় বছরে তিনবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। রোহিঙ্গা সলিম উল্লাহ (৪৬) আক্ষেপ করে বলেন, ‘মিয়ানমার জান্তা সরকার জীবনেও রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার প্রথমে এক হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। কিন্তু তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সম্মতি নেই। প্রত্যাবাসনের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।’

এ বিষয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গণহত্যা দিবসে আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোহিঙ্গাদের ছোট করে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বড় সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। চীনের মধ্যস্থতায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগে মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যের মংডুতে তৈরি আশ্রয়শিবিরে (মডেল ভিলেজ) রোহিঙ্গাদের রাখার কথা বলে আসছিল। তাতে রোহিঙ্গাদের আপত্তি ছিল। এখন মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের রাখাইনে তাঁদের ফেলে আসা জন্মভিটাতে পুনর্বাসনের কথা বলছে। তাতে রোহিঙ্গারা ফিরতে রাজি হচ্ছেন।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আশ্রয়শিবিরে থাকা সাড়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রত্যাবাসনের পক্ষে। কিন্তু মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর আশ্রয়শিবিরে হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণসহ নানা অপকর্ম ঘটিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।

উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, মধুরছড়া, টেকনাফের জাদিমুরা, নয়াপাড়া, শালবন আশ্রয়শিবির ঘুরে শতাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নাগরিকত্ব পেলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি। তবে প্রত্যাবাসনের আগে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যার বিচার কার্যকরের দাবি জানান তাঁরা।

উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের মনির উল্লাহ (৪৫) নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, আগামীকাল ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস। আগস্টের পরের কয়েক মাসে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দমন–পীড়ন, ধর্ষণ, লুটপাট, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা চালিয়ে আট লাখ রোহিঙ্গাকে জন্মভূমি ত্যাগে বাধ্য করে। এ বছরও আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, উখিয়ার কুতুপালং ও লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে গণহত্যা দিবসের দুটি পৃথক সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছেন তাঁরা। সমাবেশে ৫০-৬০ হাজার রোহিঙ্গার সমাগম ঘটানো হবে। সমাবেশ থেকে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরুর তাগিদের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সাত দফা বাস্তবায়নের দাবি জানানো হবে। দাবিগুলোর মধ্যে আছে—জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন শুরু করা, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, গণহত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর, রাখাইনে ফেলে আসা ধনসম্পদ পুনরুদ্ধার, রাখাইনের নিজ জন্মভিটাতে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ইত্যাদি।

এ বিষয়ে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, গণহত্যা দিবসকে ঘিরে আশ্রয়শিবিরে নাশকতামূলক কিছু যেন না ঘটে, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান অব্যাহত আছে।