অবাধে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও যুবকরা - Southeast Asia Journal

অবাধে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও যুবকরা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সিএনজি, অটোরিকশা কিংবা অন্যান্য যানবাহনে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গা নারী শিশু ও যুবকরা। ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া এসব রোহিঙ্গা স্থানীয়দের বাসাবাড়িতে ও বিভিন্ন দোকানে মাসিক বেতনে কাজ করছেন এবং অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। বিশেষ করে উখিয়া সদর ও কাজি পাড়া সড়কের বিভিন্ন দোকানে তারা কাজ করছেন। রোহিঙ্গা শিশুরা টোকাইয়ের মতো করে বাসাবাড়িতে যায় এবং ফেলে দেয়া জিনিসপত্র, ভাঙা বোতল কিংবা লোহা ইত্যাদি কুড়িয়ে সেগুলো দোকানে দোকানে বিক্রি করে।

এসব ছোট ছোট রোহিঙ্গা শিশু ক্যাম্প থেকে বের হয়ে দিনের বেলায় টোকাইয়ের মতো কাজ করে, আর রাতের বেলায় কোনো দোকানের বারান্দায় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১০-১২ বছরের মতো। স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গা শিশু ও কিশোররা অনেকেই সিগারেটসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যেও আসক্ত হয়ে পড়ছে। ফলে তারা দোকান ও বাসাবাড়িতে কাজের ফাঁকে বিভিন্ন অপরাধের সাথেও জড়িয়ে যাচ্ছে।

ক্যাম্পের বাইরে যাওয়া রোহিঙ্গাদেরকে জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদরা। উখিয়া রাজা পালং ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, গত ছয় বছরেও কোনো রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করা হয়নি। এ কারণে তারা ক্যাম্প ছেড়ে লোকালয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে। স্থানীয় অনেকেই এসব রোহিঙ্গাকে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে স্বল্প বেতনে কাজ দিচ্ছেন। ওই ইউপি সদস্য আরো জানান, রোহিঙ্গা শিশু, কিশোর ও যুবকরা ক্যাম্প থেকে যে হারে বের হয়ে আসছে, তা খুবই উদ্বেগ ও আতঙ্কের বিষয়। এটা আমাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।

উখিয়া সংবাদ বিতানের স্বত্বাধিকারী আমিন উল্লাহ জানান, কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, উখিয়া সদর, কোটবাজার, মরিচ্যা বাজার ও সোনার পাড়া বাজারের বিভিন্ন দোকানে, বিশেষ করে চায়ের দোকানগুলোতে রোহিঙ্গাদের কাজ করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে তুলনামূলকভাবে কম বেতনে পাওয়া যায়। তাই অনেকেই তাদেরকেই দোকানের কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ার কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গারা এভাবে ক্যাম্প ছেড়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে।

সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কেন্দ্রীয় ফেমাস সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় যুবক ও নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রোহিঙ্গারা শ্রম বাজার দখল করে রাখায় বেকার হয়ে পড়ছে স্থানীয়রা।

ক্যাম্প ২০-এ আশ্রয় নেয়া এক রোহিঙ্গা নারী জানান, তার নাম মরিয়ম বেগম। তিনি কুতুপালং ক্যাম্পে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। কুতুপালং ক্যাম্প থেকে বের হয়ে তিনি ২০ নং ক্যাম্পে যাবেন। তার সাথে ১২ বছরের তার এক নাতি রয়েছে। নাতিকে তিনি সাথে এনেছেন, কারণ সে এখানকার সব কিছু চেনে।

এ বিষয়ে ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক আমির জাফর বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের বেরিয়ে পড়া বন্ধে চেকপোস্টগুলোতে কড়াকড়ি করা হয়েছে। অনুমতিপত্র দেখানো ছাড়া কাউকে ক্যাম্প থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া উখিয়া ডিগ্রি কলেজের সামনে নতুন করে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। চেকপোস্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ধরে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে যাওয়া রোধ করতে নিয়মিত টহল ও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

You may have missed